English | বাংলা
Logo
 

 

জিজ্ঞাসাবাদের কবিতা

সরন-প্রতিসরণ, ০১-০১-২০১৫

 


Michael Hutter. Seekoenig


 

১। জিজ্ঞাসা জিঘাংসু হলে উত্তরটা প্রশ্ন দিয়ে কোরো


পরিস্থিতি আজও এরকমই
এখনও রিম্যান্ড-খাওয়া কবিতার পাশে বসে ঘামি:
 

“এই যে ক্রেজির মতো এত কিছু লেখো—
নিজেকে কী মনে করো তুমি!
তুমি না লিখলে ধরা ধ্বংস হয়ে যাবে?
এইসব বাল লিখে কী হবে লোকের, বলো দেখি?
যতসব অহেতু, অযথা!"
 

চেকার প্রশ্নের মুখে নিরুত্তর বসে থাকি একা  বোকা বোকা
মস্কোর খোলা রাতে উলঙ্গ ঠাণ্ডায়।
মনে পড়ে ভবিষ্যৎ — আটষট্টি — প্যারিসের চিকা:
″জিজ্ঞাসা জিঘাংসু হলে উত্তরটা প্রশ্ন দিয়ে কোরো।″


রাজাপ্রজা-বিবাহের রাষ্ট্রীয় এজেন্সি তো দড়!
কী প্রশ্নে উত্তর দেব তাকে বসে ভাবি ...
বরফের রেকর্ডারে জল দিয়ে লিখে রাখি বাতাসের কথা।
ইতিহাস-ইশারায় পাকস্থলী গুড়গুড় করে
কালের অতলে বসে বলশেভিক যৌথ কারাগারে
গুলাগ আর্কিপিলাগো লিখতেন সলঝেনিৎসিন।

 

আমি তো পাগল মাথা ঝিনঝিন করে সারা দিন।
রাস্তার কিনারে বসে বাল ছিঁড়ে গণ্ডায় গণ্ডায়
শোনা-কথা জোড়া দিয়ে আবর্জনা উৎপাদন করি;
তাই দিয়ে মালা গাঁথি
উপযুক্ত বানরের গলা পেলে উম্মু দিয়ে লটকাবো বলে।

 

পাগলও তো প্রশ্ন করতে পারে হে তোমাকে:
 

“তুমি নিজে ভাবোটা কী, শুনি?
এইসব বরমাল্য পেলে যত বানরেরা উচ্ছন্নে যাবে?
চারদিকে উচ্চরবে মত্ত হবে মাঙ্কিমুখো জয়জয়ধ্বনি?
দাঁতাল দণ্ডবিধি তৈলাক্ত দণ্ড বেয়ে আর কত শত
বান্দরকে ওঠানামা করাবে, বলো তো?”

 

২। কর্তৃত্বের করতালি কেন্দ্রকে ক্রমাগত করে ফেলে একা


বালছাল লিখি বলে ধরা থেকে দাসপ্রথা হয়েছে অধরা।
জাদুঘরে গেছে রাজা, সাথে করে গেছে গিলোটিন।
এখন মাথায় তাঁর টিনের মুকুট, সেলোফিন।

 

আমি আর স্বর্ণ-এমা দুই পাতা লিখেছি বলেই
বিবাহ বিপদে পড়ে গেছে:
বিশেষ চুক্তির বলে বহনীয় সকল বিবাহ।
সাম্য ও স্বাধীনতা নিয়ে লোকে কথা বলছে আজ।
সনাতন বন্দোবস্ত হয়ে উঠছে স্রেফ দুর্বিষহ।
বিগড়ে গেছে বিশ্বজুড়ে বন্দুকের মুখস্থ আন্দাজ,
আর দিশাহারা টিভির আওয়াজ।
কর্তার চশমার আড়ে চমকাচ্ছে নব নব প্রশ্নের অনির্বাণ শিখা।
সমাজে ও রাষ্ট্রাগারে উঁকি দিচ্ছে প্রেম, সখা,
ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে সম্পর্ক, সঙ্গম, সমঝোতা।

 

তুমি সেটা বুঝবে না, চেকা!
কর্তৃত্বের করতালি কেন্দ্রকে ক্রমাগত করে ফেলে একা।
আসন্ন পরিবর্তন নিজ অগোচরে
নিঃশ্বাস ফেলে তার ঘাড়ে।

 

৩। আমি লিখি আমার ও সমাজের আত্মার অসুস্থতা-হেতু


ক্রসফায়ারের যুগে আমি লিখি আমার ও সমাজের আত্মার অসুস্থতা-হেতু।
অসুখের এই গ্রহে আমার রোগের নাম চিন্তা
চিন্তানিরাময় হলো লেখা।
লিখনই চিন্তন; আর লিখনে আরোগ্য
(মামুন হুসাইনের মনোরোগলিপিবিদ্যা অধমের অতিশয় যোগ্য)।
রচনা আমার সাথে আমার ও অনন্তের ব্যক্তিগত সম্পর্কের অনিবার্য সেতু।
সম্পর্ক সুস্থির হলে  সুখের সমাজে 
লেখা বাদ দিয়ে আমি সুখদণ্ডে চিরদণ্ড নেব।
তখন সমাজে আর চেকা থাকবে না,
তাই আর এরকম দিনরাত লাগবে না লেখাজোখা-শেখা।

 

৪। জিজ্ঞাসাকে বাদ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ তো স্রেফ কর্তার কুশন


কাম অন, রিম্যান্ডিনা,
নিজের গাঁটের শ্রমে অভ্যাসের চাকরি করো না।
তোমাকে সুস্থতা পেতে সত্যিকার সুখভাতা দেবে না আইন-আদালত।
ন্যায়বিচারের নামে ওরা শেখে প্রতিশোধ
গুরুভার উল্টাপাল্টা পথ।

 

লঘু করো মন।
স্বকীয় স্বপথে এসে ব্যক্তিগত দণ্ডগত হও,
শান্ত হও, প্রেমে, অর্গাজমে
যদিও নওল, তুমি তাই বলে নাবালিকা নও!
গুরুতর এই দণ্ড দুর্লভ  অপোগণ্ড-অপগুরু-গোঁসাইঠাকুরে;
তাঁহারা ছলনা, তাঁরা এরই মধ্যে দূরে
স্বর্গপ্রাপ্ত  যমের নিয়মে।

 

ভেবে দেখো ইন্টারোগেশন
জিজ্ঞাসাকে বাদ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ তো স্রেফ কর্তার কুশন।
নিজেকে জিজ্ঞাসা করো নিখাদ অলাজে
চিরায়ত চিন্তাহীন ভূমিকায় অভিনয় করে চলা তোমার কি সাজে?
চেয়ে দেখো জলমগ্ন ঘাটে
ভ্রমণের অপেক্ষায় আছে প্রশ্ন, আছে প্রেম গভীর গহন।

 

রাজশাহী: জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৫

 
 
 
 
 
Logo