English | বাংলা
Logo
 

 

মন্থর মৃত্যুর দিকে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

সরন-প্রতিসরণ, ২১-০৫-২০১৮

 


Graphic Art: Angel Fox's Twitter Account

 

আমার মন খারাপ। সংবাদ-প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের জন্য। চাইলে তিনি সিলিকন ভ্যালির সিইও-দের একজন হতে পারতেন। প্রতি বছর কামাতে পারতেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। সেই পথ অবলীলায় পায়ে ঠেলেছেন তিনি। বেছে নিয়েছেন ভিন্ন একটা পথ। পরিণামে কারাবন্দি, নজরবন্দি, দূতাবাস-বন্দি হয়ে একটানা আট বছর চলছে তাঁর। আর আজ দুই মাস হতে চলল, বাইরের পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে তাঁকে তাঁরই আশ্রয়দাতা ইকুয়েডর-দূতাবাস।

 

সাম্রাজ্যের রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে যে-ইকুয়েডর তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া’র সেই ইকুয়েডর আর নাই। তাঁরই পার্টির লোক, নতুন প্রেসিডেন্ট লেনিন মরেনো, পাল্টি খেয়েছেন ১৮০ ডিগ্রি। মার্কিন সাম্রাজ্যের সাথে তাঁর দহরম-মহরম। বৈঠক হচ্ছে পররাষ্ট্র-কর্মকর্তাদের, সুউচ্চ পর্যায়ের সামরিক ব্যক্তিদের। চুক্তি হচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের। ইকুয়েডরে নতুন করে সামরিক ঘাঁটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। ম্যালা কিছু পাচ্ছেন লেনিন মরেনো সাম্রাজ্যের কাছে জুলিয়ানকে বেচে দেওয়ার বিনিময়ে।

 

যে-দূতাবাস ছিল তাঁর পরম আশ্রয়, সেই দূতাবাসে এখন অ্যাসাঞ্জ শত্রুশিবিরে বন্দি। যে মানুষটা আজকের ইন্টারনেটের আঁতুরঘরের উজ্জ্বলতম কুশীলবদের একজন, সেই জুলিয়ানের ইন্টারনেট সম্পূর্ণভাবে কেটে দিয়েছে লেনিন মরেনোর দূতাবাস। এ যে তাঁর ওপর কত বড় আঘাত। এ যেন তাঁর রক্তসঞ্চালনে বাধা দেওয়া। মন্থর মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। ধীরে ধীরে, রক্তের অভাবে, অক্সিজেনের অভাবে ঠাণ্ডা মাথার মৃত্যু। তারই সাথে কেটে দেওয়া হয়েছে যাবতীয় ফোন সংযোগ। বন্ধু-স্বজন-অতিথিদের কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁর সাথে। অনুমতি আছে শুধু আইনজীবীদের।

 

পৃথিবীতে কোথাও জুলিয়ানের নামে কোনো মামলা নেই। কোনো আদালত তাঁকে কোনোদিন অভিযুক্ত করে নি। উইকিলিকসের প্রকাশনা নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে যত্তগুলো মামলা হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে, প্রত্যেকটাতে তাঁরা জিতেছে। দশ বছরে যে দশ মিলিয়ন নথি প্রকাশ করেছে উইকিলিকস তার একটারও প্রামাণিকতা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলতে পারে নি। তার মানে, আইনি পথে জুলিয়ানকে আটকানোর কোনো রাস্তা নেই। তাই যত বেআইনি পথ। বেআইনই সাম্রাজ্যের আইন।

 

আমরা কোনো কথা বলব না? আমরা তো তবু খোলা আলোয়, মুক্ত হাওয়ায় আছি। আমরা কিছু করব না জুলিয়ানের জন্য? তাঁর যোগাযোগটুকু পুনরুদ্ধারের জন্য অন্তত একটা সাক্ষর তো করি আপাতত! এমন দুষ্কাল পড়েছে পৃথিবীতে, আপনার একটা সাক্ষর পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারে।

 

ক্রমিক খুনের অপরাধে দণ্ডিতরাও কিন্তু দিনে একবার ঘণ্টা খানেকের জন্য হলেও আলো-বাতাস পায়। জুলিয়ানের জন্য তাও নাই। খোলা বাতাস নাই। প্রাকৃতিক আলো নাই। আমাদের যুগের জীবন্ত মহাকাব্যের নায়ক হয়ে উঠেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। এসব বন্দিত্বে তাঁর ব্যক্তিগত আসে-যায় না কিছু। পরিণাম জেনেশুনেই নেমেছেন তিনি তাঁর স্বনির্বাচিত, চিহ্নহীনপথে। আর আজ নিজে তিনি চিহ্ন হয়ে উঠেছেন খোদ। উইকিলিকসের মশাল হয়ে জ্বলেছিলেন যিনি, তিনি আজ জগতের মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে জ্বলজ্বল করছেন। আমাদের সম্মিলিত অবহেলা সে আলোক নেভাতে পারবে না।

 

 

রাবি: ২১শে মে ২০১৮

 

 

 

 
 
 
 
 
Logo