English | বাংলা
Logo
 

 

স্বাধীনতা সহিষ্ণুতা সংগঠন

দৈনিক সোনার দেশ, রাজশাহী, ০৫-০৪-২০১৩

 

ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন

 

অচেনা দাগ
ছাব্বিশতম অধ্যায়

 

২৬.১ স্বাধীনতা দায়িত্বশীলতা প্রভুত্ব


মানুষ স্বাধীন প্রাণী হিসেবে জন্মেছে। স্বাধীনতা তার প্রকৃতিপ্রাপ্ত, অন্তর্জাত ও সহজাত, এবং আল্লাহপ্রদত্ত প্রজাতি-স্বভাব। প্রকৃতি-প্রবৃত্তি। মনুষ্যপ্রকৃতি এমন একটা সত্তা যা অনুসন্ধিৎসু, চিন্তাশীল, নিরীক্ষাপ্রবণ, সৃজনশীল, আত্মপ্রকাশপরায়ণ এবং যথাসাধ্য-সদাস্বাধীন একটা প্রাণসত্তা। স্বাধীনতা মানে কিন্তু স্রেফ জাতীয় পতাকা না। স্বাধীনতা মানে শুধু রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা মানে ব্যক্তির দৈহিক-আত্মিক স্বাধীনতা, নির্বিশেষে সকল মানুষের আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা মানে শুধু নিজের স্বাধীনতা নয়। অন্যেরও স্বাধীনতা। স্বাধীনতা মানে শুধু আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়। ভিন্নমতেরও স্বাধীনতা। ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া স্বাধীনতা কথাটাই অর্থহীন। স্বাধীনতা মানে তাই সহিষ্ণুতাও বটে। পরমত-সহিষ্ণুতা। পরাচার-সহিষ্ণুতা। পরধর্ম-সহিষ্ণুতা। পরভাষা-সহিষ্ণুতা। পরজাতি-সহিষ্ণুতা।


অন্যের মতের প্রতি যিনি সহিষ্ণু নন তিনি নিজের স্বাধীনতার মূল্য বোঝেন না। তিনি বোঝেন না: অপরের স্বাধীনতাই আমার স্বাধীনতার গ্যারান্টি। অন্যের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হলে আমার স্বাধীনতাও বিপন্ন হবে। অন্যেরা প্রত্যেকেই যদি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ অর্থ উপলব্ধি ও আমল না করে তাহলে তাঁরা আমার স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তাও বুঝবে না। আক্রান্ত হবে আমার স্বাধীনতা।


দাস দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকলে স্বাধীনতা মূল্যহীন। অপরের শরীর থেকে শুষে নেওয়া শ্রম ছাড়া যদি আমার গ্রাসাচ্ছাদনই সম্ভব না হয়, স্বাধীনতা তাহলে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির বিশেষাধিকার মাত্র। বিলাসিতা মাত্র। গুটিকয়ের প্রিভিলেজ-প্রথা মাত্র। ক্রীতদাস-ভূমিদাসদের যুগ পার হয়ে এখনও যদি মজুরিদাসত্বই করতে হয় মানুষকে, তাহলে বাস্তবে তাঁর কোনো স্বাধীনতাই নাই। স্বাধীনতা তাঁর জন্য মিষ্টি ও মূল্যহীন একটি ব্যঙ্গশব্দ-মাত্র। স্বাধীনতা মানে তাই শ্রমের স্বাধীনতা, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান- শিক্ষা-চিকিৎসা ইত্যাদি সবকিছুর পূর্ণ অধিকার। স্বাধীনতা তাই বঞ্চনা বৈষম্য থেকে স্থায়ী মুক্তির সামাজিক বন্দোবস্তও বটে।


মানুষ তাই বলে স্রেফ উদরসর্বস্ব প্রাণী নয়। শুধু খাদ্যে বাঁচে না আশরাফুল মখলুকাত। সে বাঁচে তাঁর চিন্তায়-অনুধ্যানে-অনুসন্ধানে। সৃজনের নিত্যপ্রকাশে। মানুষ শুধু প্রজননে-পরিপাকে মানুষ নয়। আত্মায়ও মানুষ। স্বাধীনতা মানুষের আত্মার জ্বালানী। স্বাধীনতার আগুনে নফসের জ্বালাতনকে জ্বালাতে-জ্বালাতে পোড়াতে-পোড়াতে তবেই মানুষ হয়ে উঠতে থাকে মানুষ। পরিশুদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে তাঁর আত্মা, আর আত্মবিকাশ। স্বাধীনতার সাধনা মানে তাই পবিত্র হয়ে উঠতে থাকার জীবনভর উপাসনা।


স্বাধীনতা মানে যাচ্ছেতাই করার প্রশ্নাতীত লাইসেন্স নয়। বরং ‘স্বাধীন’ শব্দটার ভেতরেই আছে ‘স্ব-অধীনতা’র ধারণা। নিজেকে নিজে পরিচালনা করতে পারার ধারণা। সায়ত্ত্বশাসিত-স্বপরিচালিত হওয়ার সক্ষমতার ধারণা। যিনি নিজের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন না বলে আম্মু-আব্বুকে ডাকেন, হুজুর-মুরুব্বি-মতমোড়লকে ডাকেন, তিনি কী করে স্বাধীন মানুষ হবেন? স্বাধীনতা তাই নিজের দায়িত্ব নিজে নেওয়া। কিন্তু ব্যক্তি অসম্পূর্ণ। এবং সেজন্যেই তাঁর নিজেকে সতত-বিকশিত করে তোলার জীবনভর সাধনা আরাধনা ইবাদত। অসম্পূর্ণ বলেই আবার মানুষ পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল বটে। এই নির্ভরশীলতাই মানুষকে অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে।


স্বাধীনতা মানে তাই দায়িত্বশীলতাও। স্বাধীন ব্যক্তি-মানুষ তিনি যিনি তাঁর নিজের-পরিবারের-কওমের-কমিউনিটির-মাপ্রকৃতির সমস্যা-সম্ভাবনা দায়িত্ব নিয়ে বিচলিত ও কর্মতৎপর মানুষ। এই ব্যাপারে তিনি উদাসীন থাকতে পারেন না। সমাজের শুভ-মঙ্গল-কল্যাণের প্রতি তিনি আত্মপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমাজের সমস্যাকে তিনি ব্যক্তিগত সমস্যা মনে করেন। সমাজের আনন্দকে তিনি নিজের আনন্দ হিসেবে ভাগাভাগি করে নেন।


নিজেকে শেয়ার না করলে, নিজের অনুভূতি-চিন্তা-উপলব্ধি অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে না পারলে মনে মনে মারা যায় মানুষ। স্বাধীনতার সদানন্দ মাঠে মারা যায়। সুতরাং শুধু পরনির্ভরশীলতার কারণেই নয়, পরস্পর-শেয়ারিঙের আকুলতাজনিত সহজাত মনুষ্য-প্রবৃত্তির জন্যেও এক মানুষ অন্য মানুষকে খোঁজে। একা থেকেও এক সাথে থাকে। অন্যের প্রতি আগ্রহী হয়। অন্যের প্রতি দায়বদ্ধ হয়। নিজের প্রতি দায়বদ্ধতাই তাকে অন্যের প্রতি দায়বদ্ধ করে। দায়বদ্ধ করে পরিবার ও প্রতিবেশীর প্রতি। কওম ও কমিউনিটির প্রতি। পরম ও প্রতিবেশের প্রতি। স্বাধীনতা মাত্রই তাই দায়িত্বশীলতা। দায়িত্বশীল হওয়া ছাড়া স্বাধীন হওয়ার উপায় নেই।


পরাধীন মানুষই পারেন পরের প্রতি উদাসীন থাকতে। আত্মরতিতে মগ্ন থাকতে। কেননা নিজের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা থাকে না পরাধীন লোকের। তিনি তো বাঁচেনই অন্যের অধীনে। অন্যের হুকুমে। অন্যের চিন্তায়। অন্যের ভাবাদর্শে। ফলে হয় তিনি আত্মবদ্ধ হন, নয়তো হন পালবদ্ধ। গা ভাসান গড্ডল-প্রবাহে। ভেঁড়ার পালের একজন হয়ে তিনি সুখী হন। পালের গোদার পথ ভুল হলে তিনিও বিপথী হন। বেপথু হন। কী করে মিশবেন তিনি অপরের সাথে? অপরকে তিনি ভয় করেন। তাঁর কাছে অপর মানেই ভুলের ভয়। ঠকার ভয়। নিজের ভুল নিজে করার সুযোগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেন তিনি। তিনি হয়ত ভাবেন না, ভাবলেও বুঝতে চান না বা পারেন না: ভুলহীন পথ মানে আগে থেকে শানবাঁধানো ‘নির্ভুল’ পথ। অন্যের পথ।


স্বাধীনতা মানে ভুল করারও স্বাধীনতা। ভুল করার ঝুঁকি ছাড়া অনুসন্ধান হয় না। নতুনের পথরেখা আঁকা যায় না। কৌতূহল কমে যেতে থাকে মানুষের। জিজ্ঞাসা আসে না। মানুষ হয়ে উঠতে থাকে মুখস্ত মানুষ। শাসকের-গুরুর-হুজুরের-মুরুব্বির-পুরোহিতের-যাজকের-শিক্ষকের-রাজনীতিকের-সম্রাটের রচিত দীক্ষায়ণ-প্রকৌশলের মুখস্ত ম্যানুয়াল অনুসরণ করেন তিনি। মন থাকে জগদ্দল কাদা হয়ে। সেই কাদায় গড়ে ওঠে অন্যের আদল। অপরের প্রতিমা। শাসকের শাস্ত্রধর্ম।


ভুল করার স্বাধীনতা ছাড়া স্বাধীনতা একটা কথা মাত্র। স্বাধীন মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ভুল করতে-করতে। আছাড় খেতে খেতেই হাঁটতে শেখে মানুষ। ঝুঁকি না নিলে হাঁটা শিখত না মানুষ। পা ভাঙার, কোমর ভাঙার, এমনকি প্রাণসংশয়ের ঝুঁকি। তাঁর শিক্ষা আসে ঠেকে শিখে। ট্রায়াল অ্যান্ড এররের পথেই আসে সৃজনশীলতা। কোনো ট্রেনিঙের মাধ্যমে নয়। আবোল-তাবোল ভাবতে-ভাবতেই চিন্তা করতে শেখে মানুষ। স্বাধীনতাই সৃজনশীলতার ধাত্রী। স্বাধীনতাই মানুষে-মানুষে সত্যিকারের মানবীয় সম্পর্কের — প্রেম-বন্ধুত্ব-আত্মীয়তার — সংহতি সৃষ্টি করতে পারে।


স্বাধীনতা নামক এই বস্তুটির প্রতি অবহেলা ও অপ্রীতিই মানবসমাজে যত অশান্তির মূল। যত নষ্টের গোড়া। অথচ মানুষ মাত্রেরই মধ্যে স্বাধীনতার বীজানু থাকে। মানুষের ভাষার মধ্যেই থাকে সৃজনশীলতার সক্ষমতা। তাছাড়া মানুষ অন্তহীন কথা বলে যেতে পারত না। অদ্বিত-অনন্ত-আল্লাহকে নিয়ে চিন্তা করতে পারত না। তাঁর নিজেরই ভেতরে আছে পরমের নূর। সদা-পবিত্র আলো। মানুষের অন্তর্জাত এই স্বাধীনতাবোধকে গলা টিপে ধরে কিছু কিছু মানুষ। শাসক-মানুষ।


আজকের বাংলাদেশে প্রকট হয়ে উঠেছে শাসকদের পরস্পরের গলা টিপে ধরার এই রাজনীতি। রগকাটা-গলাকাটা-গুলিবর্ষণের শাসনপ্রণালী। অথচ আল্লাহর রাজত্বে (অর্থাৎ, ভূপ্রকৃতিতে ও প্রাণপ্রকৃতিতে) ‘শাসন’-এর কোনো ধারণাই নাই। অরণ্যে-পাহাড়ে-সাগরে কেউ কারো শাসক নয়। মহাকাশে গ্রহ-নক্ষত্র কেউ কারো প্রভু নয়। আল্লাহর রাজত্বে সকলে চলে আল্লাহর নিয়মে। সেই নিয়ম অনন্ত বৈচিত্র্যের ও স্ব-অধীনতার। পরস্পর-সহযোগিতা আর স্বাতন্ত্র্যের।


তারপরও, কিছু-কিছু মানুষ হয়ে ওঠেন প্রভু-মানুষ। তাঁরা ভুলে যান: জগতের সর্বকর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর। আমাদের একমাত্র প্রভু তিনি। তাঁকে অস্বীকার করেই কেবল কিছু মানুষের পক্ষে ‘প্রভু’ হয়ে ওঠা সম্ভব আমাদের জীবনমৃত্যুর। মঙ্গলা-মঙ্গলের। এঁরা আল্লাহর সর্বময় প্রভুত্বের অংশীদারিত্ব দাবি করে বসে। এঁরা হয়ত খেয়ালই করেন না যে এর ভেতর দিয়ে তাঁরা নিজেরাই হয়ে উঠছেন আল্লাহবিরোধী। প্রকৃতির নিয়মবিরোধী। আল্লাহপ্রদত্ত মনুষ্য-স্বাধীনতার বিরোধী।

 

২৬.২ সর্বপ্রকার স্বাধীনতাবিরোধীদের তাণ্ডব


সর্বপ্রকার স্বাধীনতাবিরোধীদের তাণ্ডবই চলছে আজ বাংলাদেশে। আইন-আদালত-পুলিশ দিয়ে একদল চালাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় তাণ্ডব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে। রাজাকারনিধনের নামে। যেন গুটিকয় লোককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখলেই স্বর্গ হয়ে যাবে দেশ। সব মুশকিলের আসান হয়ে যাবে। আরেক দল তাণ্ডব চালাচ্ছেন ইট-পাটকেল-বোমা-ককটেল নিয়ে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর নামে। যেন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি মানে খোদ আল্লাহ-ইসলাম-রাসুল (সাঃ) এর ফাঁসি। আরেক দল তাণ্ডব চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন নাস্তিক-ব্লগারদের নির্মূল করার নামে। যেন গুটিকয় বাচ্চা ছেলে মহানবী (সাঃ) এর নামে নিন্দা করলেই নবীজীর গায়ে কাদা লেগে যাবে। ইসলাম উচ্ছন্নে চলে যাবে। ইসলামের হেফাজত করার স্বনিয়োজিত দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন এঁরা। উদ্দেশ্য ‘নাস্তিক’ নামক তাজা মানুষের রক্ত দিয়ে নবীজীর ভাবমর্যাদাকে ধুয়েমুছে পূত-পবিত্র করা। উপায় আইন-আদালত-মৃত্যুদণ্ড। এবং ৩১৩ জনের শাহাদাত-স্কোয়াড। বদরের যুদ্ধের ৩১৩ জন যোদ্ধার কথা মনে পড়ে যায়। যাঁরা মহানবীর সপক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন।


সর্বপ্রকার মাইক-মঞ্চ-মুরুব্বিরা এসবেরই নাম দিয়েছেন রাজনীতি। এই রাজনীতির সর্বশেষ খেলায় বলির পাঁঠা হয়েছেন কয়েক জন ব্লগার। কথাকে কথা দিয়ে মোকাবেলার শক্তি এই রাষ্ট্রের নাই। লেখা দিয়ে লেখাকে মোকাবেলার শক্তি দেখছি প্রবীণ ও প্রাজ্ঞ ‘আল্লামা’দেরও নাই। এমনকি নিন্দা-ভর্ৎসনা দিয়েও না। ডেকে নিয়ে কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে হেদায়েত-নসিহত করা দিয়েও না।


সবাইকে নিয়ে বসে আলাপ-আলোচনা করার উদ্যোগ নেওয়ার মতো কেউ নাই। রাজনৈতিক দল তো নাই-, প্রধানমন্ত্রী নাই, বিরোধী দলের নেত্রী নাই, রাষ্ট্রপতি নাই। সমাজে সর্বজনমান্য কোনো মনুষ্যসন্তান নাই। কি কপাল আমাদের! সবাই মাথা বেচে দিয়ে বসে আছেন। দালালি করছেন ক্ষমতার। কোনো না কোনো কাশিমবাজার-কুঠির।


সকলেই দেখছি দমনপীড়ন-দণ্ডবিধি চান। মানুষের স্বাধীন বিবেকবুদ্ধির ওপর কারো আস্থা আছে বলে মনে হচ্ছে না। কেউ চান রাষ্ট্রকে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদেরকে ফাঁসি দিতে। কেউ চান ঐ একই রাষ্ট্রকে দিয়ে নাস্তিকদেরকে শুলে চড়াতে। কেউ চান খোদ রাষ্ট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেরা রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে। সকলেরই চোখ রাষ্ট্রের দিকে। রাষ্ট্রক্ষমতার দিকে। সকলেই এঁরা রাজনীতি করছেন। ক্ষমতার রাজনীতি। কেউ মুক্তিযুদ্ধের নামে। কেউ ইসলামের নামে। কেউ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নামে। আর এই সুযোগে রাষ্ট্র হয়ে উঠছে আরো বর্বর। আরো বলপ্রয়োগকারী। আরো নিষ্ঠুর। আরো আইন-আদালত-দণ্ডবিধিনির্ভর। রাষ্ট্রক্ষমতা হয়ে উঠছে রাক্ষস। সর্বময় স্বৈরতন্ত্রী।

 

২৬.৩ চিন্তাপুলিশের ভূমিকায় রাষ্ট্র


সর্ব-ধারার গুটিকয় কিছু লোকের ক্ষমতা-লিপ্সার পরিণাম ভোগ করতে হচ্ছে গোটা সমাজকে। সর্বপ্রকার স্বাধীনতাবিরোধীদের কর্তৃত্বতান্ত্রিক হানাহানির কারণে খড়্গ নেমে আসছে খোদ স্বাধীনতার ওপরে। ব্যক্তির স্বাধীনতার ওপর। চিন্তা ও মত-প্রকাশের সামাজিক স্বাধীনতার ওপর। এমনকি খোদ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ওপরও। যে জাতি দীর্ঘকাল ধরে নিজেরা নিজেরা কট্টর হানাহানিতে লিপ্ত হয়, ক্রমশ তার রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব অন্তঃসারশূন্য হযে উঠতে থাকে। এ কথা বোঝার জন্য বই পড়া লাগে না। মাস্টারি করা লাগে না। রাজনীতিবিদ হওয়া লাগে না। আল্লামাও হওয়া লাগে না।


সর্বশেষ চিন্তাপুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে রাষ্ট্র। কে কী বলবে, কে কী লিখবে, সব কিছু মনিটরিং করবে রাষ্ট্র। অরওয়েলের ওশেনিয়া হয়ে উঠছে রাষ্ট্র। কেজিবি-কমিউনিস্টদের সর্বাত্মক-স্বৈরতন্ত্রী রাশিয়া হয়ে উঠছে রাষ্ট্র। ভোগলিপ্সু সৌদি শেখদের রাজতন্ত্র হয়ে উঠছে রাষ্ট্র। ‘ধর্মানুভূতি’তে আঘাতের নামে এই ব্লগ সেই ব্লগ, এই পত্রিকা সেই পত্রিকাকে নিষিদ্ধ করে চলার কাজে নেমেছে রাষ্ট্র। আইয়ামে জাহেলিয়ায় ফিরে যাচ্ছি আমরা। মন্দির ভাঙলে, প্রতিমা ভাঙলে, মসজিদে আগুন জ্বললে কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে না বলে রাষ্ট্র মনে করে। আর শুধু কয়েক লাইন লিখলেই রাষ্ট্রের ধর্মানুভূতি সাত আসমানে উঠে যায়।


ধর্মানুভূতিই কি একমাত্র অনুভূতি মানুষের? আর কোনো অনুভূতি নাই? নারায়ণগঞ্জের ‘মনের আলো’ নিভিয়ে দেওয়া ত্বকী-হত্যাকাণ্ডের অণ্ডকোষ-থেঁতলে-দেওয়া খুনী-গডফাদারদেরকে দুধকলা দিয়ে পুষে রাখলে কারো সন্তান-অনুভূতিতে আঘাত লাগে না? বিজ্ঞাপনে-টিভিতে-সিনেমায়-পত্রিকায়-রাস্তায়-রেস্টুরেন্টে-কনসার্টে-ইভেন্ট-ম্যানেজমেন্টে বড়লোকের ভোগবিলাস ও প্রাচুর্য, আর অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক খাদ্য-অপচয়ের সার্বক্ষণিক ভার্চুয়াল ও রিয়াল প্রদর্শনীতে কোটি-কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা-অনুভূতি আঘাত পায় না? সীমাহীন শানশওকত আর জৌলুষের নির্লজ্জ সীমাহীন সার্বক্ষণিক সম্প্রচারে অজস্র অভাবী মানুষের অভাব-অনুভূতি অসম্মানিত হয় না?


হিন্দুরা লংমার্চ করার ক্ষমতা রাখে না বলে রাষ্ট্র তার অনুভূতির প্রতি উদাসীন হতে পারে। খাদ্যের জন্য লংমার্চ নাই বলে ক্ষুধার্তদের অনুভূতিকে উপেক্ষা করতে পারে রাষ্ট্র। গরিবের জন্য আইন নাই। আদালত নাই। বিচার নাই। ট্রাইবুনাল নাই। লংমার্চ নাই। শাহবাগও নাই। কোটি মানুষ অন্নাভাবে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্ট হয় না। ব্ল্যাসফেমি হয় না। গরিবের জন্য হযরতের (সাঃ) দরদের কথা স্মরণ করার মতো মানুষ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। খেতে না পাওয়া মানুষের ক্ষুধা-বঞ্চনা অভাব-অভিযোগের জন্য সামাজের, এমনকি সুশীল সমাজেরও, কোথাও কোনো দৃশ্যমান হাহাকার নাই।


ব্লগারদেরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকার শাহবাগের সাথে বেঈমানি করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সরকারের জন্য ক্ষমতার খেলাধুলা মাত্র। ক্ষমতার জন্য যে কাউকে ‘জবাই’ করে দিতে কসুর করবে না সরকার। যে আসিফকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিব শিক্ষার্থীদের পক্ষে লেখার জন্য, আন্দোলনে সংগঠিত করার জন্য রাতে অন্ধকারে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ডিবি, যে আসিফকে এই সেদিন প্রায় খুন করে ফেলেছিল উন্মত্ত-মতান্ধরা, যে আসিফ ‘গলায় চাপাতির কোপ’ নিয়ে অসুস্থ পড়ে আছেন, ঘাড় পর্যন্ত ঘোরাতে পারেন না, সেই আসিফকে এবার সেই একই ডিবি তুলে নিয়ে গেল মতপ্রকাশের দায়ে। এখন দেখছি খুন হয়ে বেঁচে গেছেন রাজীব। নইলে তাঁকে তুলে নিয়ে যেত ডিবি। রাজীবের আত্মার সাথে বেঈমানি করেছে এই সরকার। আসিফদেরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ‘আল্লামা’দেরকেও ধাপ্পাবাজির গোঁজামিল দেওয়ার চেষ্টা করছে এই সরকার।

 

২৬.৪ অজ্ঞতার সংঘাত এবং স্বাধীনতার তাড়না


মানুষের রক্ত দিয়ে হযরত মুহম্মদের (সাঃ) গৌরব বাড়াতে চান যাঁরা তাঁরা তাঁর উদারতা ও ইশক এবং মহব্বত ও মহত্বের ব্যাপারে পর্যাপ্ত ধারণা রাখেন কিনা সংশয় হয়। আমি নিজে নাস্তিক নই। নাস্তিকতাবিরোধীও, নই। তবে উগ্র নাস্তিকদের ঘোর সমালোচক বটে। কিন্তু একজন লোক স্রেফ নাস্তিক বলে তাঁকে তাঁর বিশ্বাসের জন্য মেরে ফেলতে হবে, তাও মানতে পারি না। এই বাচ্চা নাস্তিকদের নিন্দা-কটুক্তির আর দোষ কী? আমাদের খোদ সমাজপতি-রাজনীতিপতিদের-সাহিত্যসংস্কৃতিপতিদের কথায়-লেখায়-ভাষায় কী ধরনের যুক্তিবুদ্ধি, বিচারবিবেচনা আর বিবেকের পরিচয় পাই আমরা? বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া অন্দরমহল থেকে আদালত পর্যন্ত কোথাও কি কোনো অনুসরণীয়-কিছু আছে? আমাদের সমাজে কি বিজ্ঞান নিয়ে, কি ধর্ম নিয়ে, কোনো সুস্থ-সহিষ্ণু আলাপ-আলোচনার চর্চা আছে? এ সমাজে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, দায়িত্বশীল জ্ঞানচর্চা, চিন্তাচর্চা, যুক্তিচর্চা হয় না বললেই চলে। তার জন্যই এত অজ্ঞতা। অজ্ঞতা মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে। অজ্ঞতা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে নিয়ে। গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে। অজ্ঞতা রাজনীতি-অর্থনীতি নিয়ে। কর্তৃত্বতন্ত্র নিয়ে। রাষ্ট্রশক্তির বিপরীতে সমাজশক্তি নিয়ে।


এই অজ্ঞতারই সংঘাত চলছে আজ দুনিয়াজোড়া। এক দিকে ঢালাও ইসলাম-নিন্দা। আরেক দিকে ঢালাও পশ্চিমাদের নিন্দা। এক দিকে সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত ক্রুসেডের ক্রূরতা। আরেক দিকে জেহাদের নামে জিঘাংসা। এই সব অজ্ঞতার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই কিছু তরুণ ভালো করে না জেনে না বুঝে আল্লাহ, মহানবী (সাঃ), ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মের মহান ধর্মপ্রচারকদের নামে আকথা-কুকথা লিখেছে। তার জন্য তাঁদেরকে হাজারবার ধিক্কার দিতে রাজি। দিয়েছিও পত্রিকার পাতায় লিখিতভাবে। কিন্তু আমি তাঁদেরকে দৈহিকভাবে অত্যাচার করতে রাজি না। আমি তাঁদের লেখালেখির জায়গা নিষিদ্ধ করে দিতে রাজি না। আমি তোমার সাথে হাজার তর্ক করব। কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করার চেষ্টা করব।


এইসব ক্ষুদ্রবুদ্ধি ব্লগারদের স্থূলরুচির, নিম্নরুচির ‘জ্ঞানচর্চা’য় আমি মর্মাহত। এইসব কুৎসায় আমার অন্তরে রীতিমতো সুতীব্র আঘাত লেগেছে। এগুলো কোনো মতপ্রকাশের চর্চা হলো? মূঢ়তা ছাড়া এ জিনিস আর কী? তারপরও কিন্তু আমি এইসব তরুণদের মধ্যে অনুসন্ধিৎসার সুপ্ত আকুতি দেখতে পাই। সর্বজীবের সর্ব আচরণে আমি মঙ্গল খুঁজতে চাই। কেননা আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন। এইসব তরুণের বিপজ্জনক মতপ্রকাশের প্রলোভনের মধ্যে মারাত্মক ঝুঁকি ছিল। প্রাণের বিপদ ছিল। তা তাঁরা জানতেনও খুব ভালো করেই। তাহলে কোন তাড়নায় তাঁরা এত বড় ঝুঁকি নিলেন? জীবন দিলেন?


এই তাড়নার নাম স্বাধীনতার তাড়না। আমি তাঁদের গর্হিত চিন্তাকে শতমুখে নিন্দা করি। কিন্তু তাঁদের স্বাধীনতা-স্পৃহাকে নয়। স্বাধীনতা-স্পৃহা ঈশ্বরপ্রদত্ত মনুষ্য-ধর্ম। হ্যাঁ, জ্ঞানের ভয়ঙ্কর অভাব ছিল এঁদের। জ্ঞানের অভাব আপনি দণ্ডবিধি দিয়ে, চিন্তাপুলিশ দিয়ে, কারাদণ্ড-প্রাণদণ্ড দিয়ে পূরণ করবেন? আমাদের জ্ঞানীগুণী-রাষ্ট্রনায়ক-ধর্মবেত্তারা সকলে মিলে কি আবার খ্রিস্টীয় মধ্যযুগের অন্ধকার চার্চতন্ত্র-যাজকতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চান? মানুষকে নতুন করে চিন্তাদাসত্বে ফিরিয়ে নিতে চান? ধুলা-ময়লার ভয়ে জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখলে যে আলো-বাতাসও ঘরে ঢুকবে না, সে কথা কি আমরা ভাববো না? কতিপয় তরুণ স্বাধীনতানীতির অধীনে ভুল করেছেন বলে খোদ স্বাধীনতানীতিকেই বিসর্জন দিলে আমরা অন্ধ অচলায়তনে আটকা পড়ব। মুক্তধারা যাবে শুকিয়ে।


মহানবী (সাঃ) বেঁচে থাকতেই কি কায়েমী ক্ষমতার অধিকারী, পুরোনো সামন্তশক্তির পূজারীরা, তাঁর নামে কুৎসা-কটুক্তি-কুকথা রচনা করেন নি? শারীরিকভাবে আঘাত, এমনকি হত্যাচেষ্টা, করেন নি? সেই দায়ে কি মহানবী (সাঃ) কাউকে সামান্য শাস্তিও দিয়েছিলেন? প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন? নাকি তাঁদের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? নিজে ক্ষমা করে দিয়েছেন? তাতে করে কি তাঁর মান-মর্যাদা ধুলায় লুটিয়ে গিয়েছিল? নাকি আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল? তাঁর পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন যে বৃদ্ধা মহিলা, তিনি কি তাঁর প্রাণহরণ করেছিলেন? যিনি নিজের মান বোঝেন না, তিনিই অন্যের অপমানে আনন্দ পান। যাঁদের আত্মসম্মানবোধের নিতান্ত অভাব, তাঁরাই অন্যের মানসম্মান ধরে টানাটানি করার মূঢ়তা দেখাতে পারেন।

 

২৬.৫ গরিবের ধর্ম, বঞ্চিতের রাষ্ট্রমর্যাদা লাভের আকাঙ্ক্ষা


খেজুরের চাটাইয়ে ঘুমানো আমাদের প্রাণের প্রিয় নবীজীর (সাঃ), আমাদের প্রিয়তম শিক্ষকের, আল্লাহর পেয়ারা হাবিবের মানসম্মান বাঁচানোর নামে যাঁরা আজ আপদের ওপর বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছেন, তাঁদেরকে আরেক বার ভেবে দেখতে অনুরোধ করি। আল্লাহর ওয়াস্তে। নবীজীর (সাঃ) ওয়াস্তে। ধর্ম কায়েমের নাম করে যাঁরা আজ কোটি কোটি মানুষের জীবিকা-মর্যাদা-স্বাধীনতাকে জিম্মি করে ‘সারাদেশে আগুন জ্বলবে’র হুমকির অধীনে নিয়ে আসছেন, তাঁদের নেতাদেরকে দেখলাম (তাঁদের গরিব, মজলুম অনুসারীদেরকে নয়) অত্যন্ত দামী সিংহাসন-মার্কা চেয়ারে বসে বক্তৃতা করছেন। কওমী মাদ্রাসার লাখো লাখো গরিব শিক্ষার্থীদের কয় জনের বাসায় ওরকম একটা চেয়ার তো দূরে থাক, একটা সাধারণ চেয়ার-মোড়া-খাট-চৌকি আছে, জানতে ইচ্ছে করে। এই দুঃখেই বলি: সকলেই সিংহাসনপনন্থী। সকলেই ‘আগুন জ্বলবে’ পন্থার অনুসারী। সকলেই পুলিশপন্থী। সকলেই বলপ্রয়োগের ব্যাপারি।


একেবারে ‘টুঁটি টিপে ধরা’র কথাই শোনা গেল হেফাজতে ইসলামের নেতাদের মুখে। ১৭ই মার্চের প্রথম আলোয় দেখছি, ঢাকায় লালবাগ মাদ্রাসায় বসে ‘কমিটি গঠনের পর সভায় হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী সম্পর্কে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিরূপ মন্তব্য করেছেন অভিযোগ করে তাঁর সমালোচনা করা হয়। ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বলেন, জীবদ্দশায় ফজলুল হক আমিনীর বিরুদ্ধে শাহরিয়ার কবির মামলা করেছিলেন। এখন তিনি আহমদ শফীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করছেন। এখনই এসব নাস্তিকের টুঁটি চেপে ধরতে হবে।’ এ কি মহানবীর অনুসারী আল্লামাদের মুখের ভাষা!


একবার পত্রিকায় গা শিউরানো এক ছবিতে দেখেছিলাম মহা উদ্ধত এক পুলিশ অফিসার ঠাণ্ডা মাথায় টুঁটি টিপে ধরেছেন এক সাংবাদিকের। কি ভয়ংকর সেই দৃশ্য! ভোলা যায় না। ক্ষিদে পেলে বাঘ-ভাল্লুক-শেয়াল-সিংহরাও টুঁটি টিপেই ধরে। আমাদের প্রশাসন-মন্ত্রীমিনিস্টার-রাজনীতিবিদ-শিক্ষাবিদ-সমরবিদরা তো টুঁটি টিপে ধরছিলেনই। এবার আল্লামারাও সেই ভাষায় কথা বলছেন। তাঁদের আর দোষ কীসের? সঙ্গদোষে লোহাও ভাসে। কর্তৃত্বনীতিতে পরিচালিত আমাদের বলপ্রয়োগের সমাজে মহানবীর (সাঃ) প্রেমধর্মকে আরো অনেক ধৈর্য আর ত্যাগ-তিতিক্ষার সাধনা করতে হবে বোঝা যাচ্ছে।


এদিকে রাজাকারে আর নাস্তিকে ভরে গেছে দেশ। সকলেই আড়চোখে সকলকে দেখছেন। সকলেই সকলের চোখে রাজাকার অথবা নাস্তিক হয়ে হয়ে উঠছেন আস্তে আস্তে। ইসলামের ‘হেফাজতকারী’ আল্লামাদের কথায় বুঝলাম, দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা এখন নাস্তিক সরকারের অধীনে। আর রাজাকাররা তো কদিন আগেই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন ছিলেন। নাস্তিকে ভরে গেল দেশ। অথচ কোটি-কোটি আমজনতা মুসলমান চুপ করে ঘরে বসে আছেন। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এই কৃষক-নমশূদ্র-গরিব ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান পরিবারগুলোই স্বাধীনতা-সমতা-ইনসাফের ইসলামের বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন। সুফী-দরবেশদের কোলাকুলিতে এদেশে অভিসিক্ত হয়েছিল ইসলাম। নাস্তিক-মুরতাদ-মৃত্যুদণ্ড এদেশে ইসলামের কায়েমের তরিকা ছিল না। হুগো শ্যাভেজের মতো নাস্তিককে যে সম্মান দেখিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট তা থেকে কি আমরা কিছু শিখব না। আমরা সবাই মিলে কি শুধু নির্মূলের রাজনীতি করব? ধর্মানুভূতিতে আঘাত অত্যন্ত নিন্দনীয়। কিন্তু পুলিশের মতো ‘পবিত্র’ প্রতিষ্ঠান দিয়ে কি তা ঠেকানো যাবে?


কওমী মাদ্রাসার রাষ্ট্রপ্রসাদবঞ্চিত, রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, গরিব মানুষদের সম্প্রদায়টিকেই বা দোষ দিই কীভাবে? বড় বড় পাশ করা কপট ডক্টর-প্রফেসর-ব্যারিস্টারদের এই রাষ্ট্রে আমরা তাঁদের ঠাঁই দিই নি। মর্যাদা দিই নি। সমাজের বিরাট একটা অংশকে আমরা অমর্যাদা আর অভাবের গর্তে ফেলে রেখেছি হাজার হাজার বছর ধরে। কালান্তরের বঞ্চনার পরিণামে ঐ একই স্বাধীনতার স্পৃহা আজ প্রতিক্রিয়াশীলতার পোশাক পরে ‘কিছু-একটা’র প্রতিবাদে নেমেছে। তাঁদেরও তো অধিকার আছে, আত্মমর্যাদার বোধ আছে, বিদ্যমান রাষ্ট্রক্ষমতায় হক আছে। এর সুরাহা না হলে দেশে শান্তি আসবে কী করে, কেউ বলতে পারেন?


আমরা পরস্পরকে বুঝতে চাই না। আমরা পরস্পরকে সম্মান করতে রাজি না। আমরা সবাই সবাইকে নির্মূল করতে চাই। মানবজাতির অন্যতম প্রিয় শিক্ষক স্বয়ং হযরত মুহম্মদ (সাঃ) ঐশী উপলব্ধি মারফত জানালেন, প্রকৃতিতে সৃষ্টিকর্তার সৃজনসত্তার ইশারা আছে। তোমরা তা নিয়ে চিন্তা করো। সেখান থেকে তোমরা শেখো। তাকিয়ে দেখা গেল: অনন্ত জীববৈচিত্রই প্রকৃতির এক নম্বর আইন। বৈচিত্র্যে ব্যাঘাত ঘটলে সৃজনসত্তা ব্যাহত হয়। আমরাই সকলে ক্ষতিগ্রস্ত হই। অথচ আমরা শুধু মানুষের মধ্যকার চিন্তা-মত-ধর্ম-ভাষা-জাতীয়তার বৈচিত্র্যটুকুকেও ধারণ করতে রাজি নই। আজকের রাষ্ট্র-শাসকশ্রেণী-পুঁজিপ্রথা রাজি নয়।


রাত জুড়ে, প্রহরে প্রহরে, শেয়ালদের কানফাটানো চিৎকারে স্বস্তির ব্যাঘাত ঘটার অভিযোগে বাঘ-ভাল্লুক-সিংহ মিলে শেয়াল-নির্মূলে নামে না। আর আমরা ভিন্নমত দেখলে সন্দেহ করি। লাঠিহাতে তেড়ে আসি। ভর্ৎসনা করি। নিন্দা করি। নির্মূল চাই। নেতাকর্মী-লেনিনবাদী-লাদেনবাদী সকলেই তাই করেন। এখন দেখছি আল্লামারাও তা-ই করছেন। আল্লাহর কঠোরসত্তা ছাড়া দয়ামায়া-রহমত-ক্ষমা-শুভ-সত্য-সুন্দর-কল্যাণের সত্তার কি আমাদের পরিচয় ঘটবে না? আল্লাহকেও আমরা দেখছি একজন ব্যক্তি-প্রশাসক/ব্যক্তি-সম্রাট বানিয়েই ছাড়ছি। আর নিজেরা হচ্ছি তাঁর স্বঘোষিত অনুচর-গুপ্তচর-কনস্টেবল। আল্লাহপাকের নিরাকার সত্তার অজস্র অভিপ্রকাশের রূপবৈচিত্র্য গভীরভাবে অনুসন্ধান করার ধৈর্য অর্জন সবার জন্য সহজ নয় বলেই হয়ত।

 

২৬.৬ আসছে বসন্তের আগাম ব্যাকপ্যানেল


আমাদের মুক্তির প্রকৃত পথ হলো স্বাধীনতা-সৃজনশীলতা-সংহতি-সহযোগিতার পথ। শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা আমল করার বাস্তব উপায় কী? উপায় পাল্টাপাল্টি কমিটি-টমিটি গঠন না করে গণমানুষের গণপরিষদ গঠন করা। প্রত্যেক পরিবারের এক বা একাধিক প্রতিনিধি নিয়ে। প্রত্যেক শহরে। প্রত্যেক পাড়ায়। প্রত্যেক মহল্লায়। কিন্তু কোনো দলের প্রতিনিধি না। কোনো গোষ্ঠীর প্রতিনিধি না। কোনো মতবাদের প্রতিনিধি না। এঁরা প্রত্যেকে নিজেদের ক্ষুদ্রস্বার্থের-ক্ষমতাস্বার্থের বাইরে ভাবতে ব্যর্থ হয়েছেন। অসংখ্য মানুষের আকুল আন্তরিক চাওয়া সত্ত্বেও এঁরা নিজেরা একসাথে বসতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখনও তাঁরা বিষাক্ত সাপলুডু খেলে চলেছেন মানুষের জান-মাল-সন্তান-পরিজনের ভূত-ভবিষ্যত-বর্তমান নিয়ে। লাঠি হাতে নিয়ে। বোমা-বন্দুক-ককটেল নিয়ে। যাবতীয় রাজনৈতিক দল-মত-কার্যকলাপকে তাই প্রত্যখ্যান করার দিন এসেছে।


যাঁরা দল করেন তাঁরাও আসবেন বৈকি গণমানুষের গণপরিষদে। আসবেন নিজ নিজ পরিবারের প্রতিনিধি হয়ে। আমরা কেউ কারো শত্রু না। সবাই মিলেই আমাদের সমাজ। সবার ওপর আমাদের সবার মঙ্গলের দায়িত্ব। সবাই আসুক। একসাথে বসুক। আলাপ-আলোচনা চলুক দিন জুড়ে। রাত ধরে। কথাবার্তা-তর্কবিতর্ক হোক সপ্তাহ জুড়ে। মাস ধরে। বছর ধরে। ধীরে ধীরে ঐকমত্য গড়ে উঠুক অন্তত ন্যূনতম রাষ্ট্র-সামাজিক প্রশ্নে: স্বাধীনতা আর আত্মকর্তৃত্বের প্রশ্নে।


সংগঠন বলতে যাঁরা স্রেফ হাকিম-হুকুমের আমলাতান্ত্রিক সংগঠন বোঝেন, তাঁরা আমার গণমানুষের গণপরিষদের ধারণায় হাসবেন। অবাস্তব বলে অবজ্ঞা করবেন। জানা কথা। অজানা হলো স্বাধীনতাশীল সংগঠন-প্রণালীর কথা। কর্তৃত্বপরায়ণ, উপরনিচের, আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের বাইরে সংগঠনের ধারণা চিরকাল ছিল এবং আজও আছে। বাংলা-বসন্তের প্রথম ইনিংস উঁকি দিয়ে গেল। সাফল্য-ব্যর্থতার আত্ম-অনুসন্ধান্যর কর্তব্য তো করতেই হবে। কিন্তু তা করতে হবে আসছে বসন্তের আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই বটে।


সামাজিক আন্দোলনের খুব সুন্দর একটা ওয়েবসাইট বানানোর স্বরচিত তাগাদা-তীব্রতার একটা আন্তরিক আকুতি তৈরী করেছিলেন নির্দল তরুণেরা। কিন্তু দলবাজ রাজনীতিবাজ ধান্দাবাজরা এই দফায় মঞ্চ-মাইক-মুরুব্বি-মিডিয়ার কৃত্রিম কেন্দ্র বানিয়ে তরুণদের পথ আগলে বসে থাকলেন। এটা সম্ভব হলো তার প্রধানতম কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের ব্যাকপ্যানেলটা স্বাধীনতার টেকসই নীতিতে তৈরী করা ছিল না। যা-ই হোক, রাষ্ট্র-মিডিয়া স্পন্সরশিপের সেই লীলা এখন শেষ পর্যায়ে। এবার নবজাগরণের নবতরঙ্গের স্লোগান উঠুক। বসন্ত এই বাংলায় আসার জন্য মুখিয়ে আছে। আসছে বসন্তের, আরেক ফাল্গুনের প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই সময়।


সেই প্রস্তুতির প্রথম ঝলকটাই দেখা গেল রুমী স্কোয়াড গঠনের মধ্য দিয়ে। আবার, রুমী স্কোয়াডের আমারণ অনশন নিয়েও দেখা গেল রাজনীতি। কেননা নিজেরা আমরণ অনশন না করে আমারণ অনশনে সংহতি জানানো যায় কেমন করে সেটা বোঝা সত্যিই কঠিন হয়ে গেল। বাচ্চারা সব মরতে বসেছে, আর বুড়োরা-চিন্তাবুড়োরা গোল হয়ে হাততালি দিচ্ছেন: ‘মরাটা খুব সুন্দর হচ্ছে! চালিয়ে যাও! তোমরা মরে যাও, নো চিন্তা আমরা সংহতি জানাবো। ফুলের মালা দেব। কিন্তু তাই বলে আমরা তোমাদের মতো আমরণ অনশন করে মরতে পারব না।’ অনশনকারীদের লাশের জন্য অপেক্ষা করছিল রাজনীতির শকুন। অনশনকারীদের লাশ দিয়ে সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল লাশের রাজনীতিরই নামান্তর।


হয় বিপ্লব না হয় মৃত্যু’র সাথে ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’র পাথর্ক্য কোথায়? বিশেষত তরুণদেরকে তাই সতর্ক হতে হবে বৈকি। যিনি জানেন না সামনের দিনগুলোতে কী করে আন্দোলন-সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, যিনি জানেন না নতুন সমাজের জন্য লাগাতার অজস্রমুখী কাজ কীভাবে করতে হয়, যিনি জানেন না প্রচলিত রাজনৈতিক ভণ্ডামীর বিকল্প তৎপরতার ভিশন কী হতে পারে, তাঁরা মরার আবেগের রাজনীতি ছাড়া পথ দেখেন না। কিন্তু এখন আসলে মরার টাইম নাই। মরার জন্য বিপ্লব অনেক হয়েছে। সামনের দিনের বিপ্লব হবে বেঁচে থাকার বিপ্লব: ‘এ রেভোলিউশন টু লিভ!’


রুমী স্কোয়াডের আবেগ নিঃসন্দেহে মহামূল্যবান। কেননা আবেগেই সৃজন-আন্দোলন-সংগঠনের প্রাণ। কিন্তু নবজাগরণের দ্বিতীয় তরঙ্গে এখন দরকার এই আবেগের উপযোগী নয়াসাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করানো। তার জন্য আমাদের লাগবে আত্মকর্তৃত্বের আত্মসংগঠন। আমাদেরকে শিখতে হবে অকুপাই থেকে। আরব-জাগরণ আর স্পেনীয় জাগরণ থেকে। ‘মাইক-মঞ্চ-মুখপাত্রের’ লেনিনীয়-লিবারাল-আমলাতান্ত্রিক ধ্যানধারণা নিয়ে এবার আমাদের ভাবা দরকার। পুনঃবিবেচনা করা দরকার। মনে রাখা দরকার, এইসব ‘বালা-মুসিবত’ ছাড়াও নতুন ধারার আন্দোলনের ব্যাকপ্যানেল বা সংগঠন-কাঠামো তৈরি করা সম্ভব।


তার জন্য চাই ছোট ছোট স্বাধীন-সার্বভৌম স্বতন্ত্র অজস্র দল-সংগঠন-পাঠচক্র-ফোরাম-সংস্থার সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক। এই জাতীয় স্বতন্ত্র-স্বাধীন গ্রুপসমূহের কোনো কমিটি থাকে না। রিক্রুটমেন্ট থাকে না। বহিষ্কার থাকে না। যোগাযোগ-মুখপাত্র থাকে। কিন্তু মুখপাত্র বদলায় যত ঘন ঘন সম্ভব। সিদ্ধান্ত হয় সর্বসম্মতির ভিত্তিতে। এই দলগুলোকে সেল (কোষ), ন্যাচারাল গ্রুপ (স্বাভাবিক দল), ব্লক ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। প্রতিটা কোষের আলাদা নাম থাকে। রক্তজবা পাঠচক্র, কালোগোলাপ চলচ্চিত্রসংসদ, কিউরিয়াস জর্জ ব্রিগেড, জাহানারা ইমাম ব্যারিকেড, শহীদ রুমী স্কোয়াড, ইত্যাদি প্রভৃতি যেকোনো নাম।


এই নেটওয়ার্কের ব্যাকপ্যানেলে প্রতিটা কোষই আলাদা স্বাধীন স্বশাসিত স্বতন্ত্র দল। কেউ তার ওপর মত চাপাতে পারে না। কোনো মেজরিটি না। মেজরিটি-মাইনরিটির কারবারই নাই এই প্রণালীতে। একইভাবে কোনো কোষ-সংগঠনও অন্যের ওপর, বা নিজেদের সদস্যদের ওপর, কোনো মতামত চাপাতে পারে না। এরকম অসংখ্য কোষ স্বেচ্ছায় পারস্পরিক সম্মতি এবং পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়। গড়ে তোলে কোষতন্ত্রের নেটওয়ার্ক। এরকম নেটওয়ার্ক পুলিশ দিয়ে, হামলা দিয়ে দমন করা কঠিন।


নেটওয়ার্কের সিদ্ধান্ত হয় প্রত্যেকটা কোষের একজন করে প্রতিনিধিদের যৌথ সভায় — সেই সর্বসম্মতির ভিত্তিতে। এইরকম সভা বা সমন্বয়-সংস্থাকে বলে স্পোক (রিকশার স্পোকের মতোন) বা স্পোক-কাউন্সিল। সাইকেল-রিকশার স্পোকগুলো যেমন চাকাকে শক্তিশালী করে তোলে, চাকাকে জোরে-আস্তে ঘুরতে সাহায্য করে, তেমনি এই স্পোক-কাউন্সিলও তাই। স্পোক/প্রতিনিধিরা এই সমন্বয়-পরিষদে এসে কী বলবেন তা নিজেরা ঠিক করেন না। সেটা ঠিক করা হয় নিজের নিজের কোষ-সংগঠনে বসে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে। গৃহীত সেই সিদ্ধান্ত মুখপাত্র জ্ঞাপন করেন মাত্র। তিনি কোনো বিবৃতি দেন না। বক্তৃতা দেন না। নেটওয়ার্কের মূল নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত স্পোক-কাউন্সিল নিতে পারেন না। মূল নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পুরো নেটওয়ার্কের সকল সভ্যের সম্মিলিত সভায়। ঐ সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই।

 

২৬.৭ আসন্ন ঘূর্ণিঝড়


পরিস্থিতি একই রকম থাকবে কত কাল? হয় এর উন্নতি হবে। নইলে অবনতি ঘটবে। একটা লণ্ডভণ্ড-ঘূর্ণিঝড় তার মানে আসন্ন। রাজনীতির রাক্ষসতন্ত্রকে প্রতিরোধের পথ বের করা ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই। আমাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এবার নিজেদেরই কাঁধে নিতে হবে। এতদিন ধরে বুদ্ধিমান রাজনৈতিক বানরবৃন্দ এসে আমাদের মাথায় বসে কাঁঠাল খেয়েছেন। এবার তাঁরা খেতে শুরু করেছেন মানুষের তাজা মাথা। পেটভরা-চর্বিজমা মানুষদের, ত্বকের চেয়ে দামি জামাকাপড় পরা মানুষদের, ক্ষমতালিপ্সার অন্তঃহীন রিপু-চর্চা বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে দিশাহীন অন্ধকারের দিকে। আর সেই অন্ধকারের ছায়ায় বসে আমাদের দিকে নজর রাখছে ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও সামরিক প্রকল্প’। আমরা কি সব দিকে নজর রাখতে পারছি?

 

আদিপ্রকাশ: দৈনিক সোনার দেশ, রাজশাহী, ৫ই এপ্রিল ২০১৩
পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত পাঠ:
ফেসবুক-নোট, ৬ই এপ্রিল ২০১৩

 

প্রসঙ্গকথা

আদিতে এ রচনার খানিক ছোট একটি পাঠ ছাপা হয়েছিল রাজশাহীর দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার ৫ই এপ্রিল ২০১৩ রোজ শুক্রবারের সংখ্যায়। আমার গাফেলতিজনিত সময়াভাবে সেখানে কিছু টুকটাক বানান-বাক্য সমস্যা থেকে গিয়েছিল। প্রতি হপ্তায় কলাম লেখার তাড়াহুড়াও ছিল। পরে ঐ লেখার পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত পাঠ দিতে চেয়েছিলাম ফেসবুক-নোট আকারে। দিতে গিয়ে দেখি লম্বা হয়ে গেছে। ফেসবুকে স্বতন্ত্র একটা নোট হিসেবে আঁটলো না। তাই আমার নিজের ওয়েবসাইট (salimrezanewton.com) থেকে ফেসবুকে শেয়ার দিতে হয়েছিল। [সেই সাইট এখন আর নাই। ডোমেইনটা এখনও অবশ্য আমার নামে আছে। সেটাতে ঢুকতে গেলে বর্তমান এই সাইটে চলে আসে ট্রাফিক। সেভাবে রিডাইরেক্ট করা আছে।] সেই পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত পাঠই এখানে দেওয়া হলো। তো, দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ঐ লেখাটার শিরোনাম ছিল: ‘স্বাধীনতা সহিষ্ণুতা চিন্তাপুলিশ’। ফেসবুকে শেয়ার দেওয়ার সময় দেখলাম সেটা ঠিক যুৎ লাগছে না। তাই সেটাকে পাল্টে দিয়ে করলাম: ‘স্বাধীনতা সহিষ্ণুতা সংগঠন’। [লেখাটা একই সাথে বা কাছাকাছি সময়ে ঢাকার দৈনিক বণিক বার্তা পত্রিকাতেও ছাপা হয়েছিল বোধ হয়। চেক করে দেখে সে ব্যাপারে পরে এখানে বলা যাবে।]

 
 
 
 
 
Logo