English | বাংলা
Logo
 

 

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ: ঝুঁকি বলতে কী বোঝায়?

সরন-প্রতিসরণ, ২০-০৭-২০১৭

 
 
 
অনুবাদ: সেলিম রেজা নিউটন
 
 
শহীদ হওয়াতে আমি বিশ্বাস করি না। খুবই বিরল কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে মানুষের শহীদ হওয়া উচিত। কিন্তু ঝুঁকি নেওয়া অবশ্যই উচিত মানুষের। সতর্কভাবে উপলব্ধি করা উচিত ঝুঁকিগুলো ঠিক কী কী। সেই সাথে বোঝা উচিত পরিস্থিতির সুযোগগুলোই বা কী কী। এবং নিশ্চিত করা উচিত যেন এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। কখনো কখনো ঝুঁকির মাত্রা হতে পারে খুবই উঁচু কিন্তু হয়ত সুযোগও থাকতে পারে চরম উঁচু মাত্রায়। এখানে সুযোগ বলতে আমি এমন জিনিস বোঝাই যা তুমি চাও, যাতে তোমার যায়-আসে।
 
আমরা যেন জিনিসগুলোকে একটা প্রেক্ষাপটের ভেতর স্থাপন করি। তার মানে— নিষ্ক্রিয়তার ঝুঁকি কিন্তু চরম মাত্রায় বেশি হতে পারে, কেননা প্রত্যেকটা দিন তুমি তোমার জীবনকে যাপন করে ফেলছ। হারিয়ে ফেলছ তুমি জীবনের আরও একটা দিন। তাহলে স্রেফ বসে থাকার ঝুঁকিটা কেমন? বলতে চাচ্ছি, আস্ত একটা দিন তুমি হারিয়ে ফেলছ স্রেফ। আরো একটা দিন তোমার মরা হয়ে যাচ্ছে। আর, এ রকম দিন তোমার খুব বেশি তো নাই। বলতে চাচ্ছি, যা যা তুমি চাও সেগুলোর জন্য যদি তুমি লড়াই না করো, আর যদি এভাবে হারিয়ে যেতে থাকে একটা করে দিন, তাহলে তার মানে হলো, হেরে যাচ্ছ তুমি।
 
 
 
প্রসঙ্গকথা
 
অস্কারবিজয়ী মার্কিন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা লরা পয়ত্রাস ছয়-সাত বছর ধরে অবাধে শুট করার সুযোগ পেয়েছিলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে। উদ্দেশ্য ছিল জুলিয়ান এবং উইকিলিকস নিয়ে একটা প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা। সেই ২০১০-এ শুরু করা কাজ ডকু-ফিল্ম আকারে মুক্তি পেল এসে ২০১৭ সালে। ছবির নাম ঝুঁকি। উপযুক্ত নামই বটে। কিন্তু ছবিটা মোটেও উপযুক্ত হয় নি জুলিয়ান এবং উইকিলকসের ঝুঁকির তুলনায়। কেন হয় নি, কী ব্যাপার সেসব কথা এখানে। বছর-কাল আগে কান চলচ্চিত্র-উৎসবে এ ছবির অন্য একটা ভার্সান দেখিয়েছিলেন লরা। ছবি দেখা হলে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি সারাহ হ্যারিসন এবং জ্যাকব অ্যাপেলবমকে সাথে নিয়ে। তখন মনে হয়েছিল সে-ছবিই চূড়ান্ত। কিন্তু সিনেমার বাজারে যখন ছবিটি মুক্তি দিলেন তিনি এ বছর, তখন দেখা গেল কান টানলে মাথা আসে না। সেই ছবি আর এই ছবি আকাশ এবং পাতাল।
 
আরও ক-বছর আগে তিনি এ ছবির আরও একটা ‘কাট’ দেখিয়েছিলেন বোধ হয় নিউ ইয়র্কে, অ্যাক্টিভিস্ট-সার্কেলে। ছবিটা নিয়ে নিয়ে মেলা কিছুই করেছেন লরা। এ ছবি বানাতে বানাতে আসে ২০১৩ সাল, এডওয়ার্ড স্নোডেন পর্ব। লরাকে তখন ছুটতে হয় স্নোডেনকে শুট করতে হংকং। সে কাজ সেরে এসে একবার তাঁর মনে হয়েছিল উইকিলিকস নিয়ে যে মুভি তিনি বানাচ্ছেন, স্নোডেন-পর্ব তারই অন্তর্ভুক্ত একটা অংশ হবে হয়ত। আসলে উইকিলিকসের মতো এত বেশি বিরাট বিরাট প্রপঞ্চ একটি ডকুমেন্টারিতে যুৎসইভাবে আঁটানো, এ নিয়ে একটা সত্যিকারের অর্থপূর্ণ সিনেমা তৈরি করা তো খোদ সিনেমাটিক আর্টের জন্যই একটা চ্যালেঞ্জিং ঘটনা আসলে। লরার সক্ষমতা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা নিয়ে কথা নেই। স্নোডেন-পর্বটি পরে যখন তিনি “সিটিজেন ফোর” হিসেবে মুক্তি দিলেন সেটা হলো একটা চরম অনবদ্য ডকুমেন্টারি। পেল সেটা অস্কার অবলীলায়। কিন্তু পরিস্থিতি পেঁচিয়ে গেল “ঝুঁকি” নিতে এসে।
 
“ঝুঁকি” কী হতে পারত, আর কী হয়েছে, কী হয় নি, কেন হয় নি, সেসব কথা পরে কোথাও হবে। এটুকু আমি বলে রাখতে পারি, ছবিটাতে জুলিয়ানের আলোকচ্ছটা খুঁজেই পাওয়া যায় নি। একেবারেই না। এবং বোঝাই যায় নি উইকিলিকস জিনিসটার মাজেজা আসলে কী। এতগুলো বছরের এত এত দুষ্প্রাপ্যতম ফুটেজ বৃথা গেল লরার। সেসব যদি কখনও বিচ্ছিন্ন, কাঁচা ফুটেজ বা রাশপ্রিন্ট হিসেবেও কখনও আমরা পেতাম, আহা!
 
তবু ছাইচাপা দিয়ে যেমন আগুন লুকানো যায় না, তেমনই “ঝুঁকি’তেও দেখা গেছে জুলিয়ানের অকৃত্রিম ঝলক। এখানে জুলিয়ান অ্যসাঞ্জের যে-সামান্য কয়টা কথা “ঝুঁকি” থেকে আমি টুকে নিয়েছি তাতেই এক ঝলক ঝলসে উঠতে দেখা গেছে তাঁর চিন্তা, কাজ আর দার্শনিকতার মিশেলকে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের এই কথকতাটুকু লিখিত বাক্য আকারে মুভি থেকে টুকে নিয়ে সাজিয়েছি আমি। তারপর অনুবাদ করেছি আমার বুঝ মতো।
 
এই টুকরা-রচনার উপরে যে ছবি যোগ করেছি সেটা “ঝুঁকি”র একটি স্ক্রিনশট। আমার নেওয়া। ছবিতে অ্যাসাঞ্জ যেখানে ওপরের কথাগুলো বলছিলেন, স্ক্রিনশটটা সেই সব মুহূর্তের একটির। অনুবাদ-করা কথাটুকু ছবিতে যে-সময়াঙ্কে আছে তা হলো ০:২৩:০০—০:২৪:০৪।
 
এ অনুবাদ অন্যত্র অপ্রকাশিত এখনও পর্যন্ত। প্রকাশে আমার আপত্তি নেই— সরন-প্রতিসরণ-এর লিংকটুকু দিলেই হলো। আর, এ রচনা ডাউনলোড করা যাবে নিচের পিডিএফ-লিংক থেকে।
 
 
— স.র.ন.
রাজশাহী: ৪ঠা শ্রাবণ ১৪২৪, ২০শে জুলাই ২০১৭
 

 
  PDF
 
 
 
 
Logo