English | বাংলা
Logo
 

 

রাজকীয় মুক্তির ছলনা

ফেসবুক, ২৪-০৫-২০১৬



মনে রেখো মিনাজেল,
ক্ষমতায় যদি তুমি এমনকি বিশ-ত্রিশ-চল্লিশ বৎসরও থাকো,
তারপরও মনে রেখো মার্কোস— ইমেলদা মার্কোস।
মনে রেখো মহামতি জেনারেল সেক্রেটারি, রাজা ও বাদশাহ—
বাতিস্তুতা, বেন আলী, চওসেস্কু, হোসনি মোবারক।

মনে রেখো মিনাজেল,
ক্ষমতায় ইনারাও বড় বেশি ভালো লোক ছিল।
মুক্তি ও মঙ্গলের যাবতীয় দায়িত্ব ও দায়
এক হাতে ছিল উনাদের।

অবশেষে অনেক সাধের
পৈতৃক প্রকল্প ছেড়ে পলাতক সিংহদের স্বনামখচিত প্রাসাদের
ভেতরে ঝঞ্ঝার মতো ঢোকা জনরোষ
যে দিন সমস্ত কিছু করল বিদায়,
সেই দিনটুকু মনে রেখো, মিনাজেল—
ভিসুভিয়াসের মতো আচমকা উগরানো গণঅসন্তোষ!

ক্ষমতার বলে
এক হাতে তালি যারা বাজালো বগলে,
তাঁদের অন্তিম দিন হাততালিমুখর ছিল না।
ধ্বংসের শেষ সন্ধিক্ষণে
অনেকেরই ফুটা লণ্ঠনে
জোটে নাই এক ফোঁটা তেল কিংবা এক দম বিমল বাতাস:
‘মাংশের দোকানে পড়েছিল, মিনাজেল,
প্রেসিডেন্টের লাশ!’

কি দরকার, মিনাজেল— বলো না, বলো না!
এত প্রাণ, সুখশান্তি, স্বস্তি বলি দিয়ে
এরকম মঙ্গল ও মুক্তির ছলনা?



রাবি: ২৪শে মে ২০১৬



চিত্র-পরিচিতি

উপরের ছবিটা রাশিয়ার শেষ সম্রাট জার দ্বিতীয় নিকোলাসের ভেঙে ফেলা মূর্তির। ১৮৯৪ সালে সিংহাসনে বসেছিলেন তিনি। ১৯১৭ সালে শ্রমিক-সৈনিক-জনতার ‘ফেব্রুয়ারি-বিপ্লব’-এর রেশ ধরে মার্চ মাসে পতন ঘটে এই জারের। সপরিবারে, চাকরবাকর সহকারে, বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে ইয়েকেতেরিনবার্গ শহরের এক প্রাসাদে। বন্দিই ছিলেন সেখানে কিন্তু ১৯১৮ সালের জুলাই মাসে প্রতিবিপ্লবী সৈন্যবাহিনী এগিয়ে আসল যখন, বিপ্লবী শ্রমিক-সৈনিক সোভিয়েতের মনে ভয় ধরে যায় যে, জার দ্বিতীয় নিকোলাস মুক্ত হয়ে যেতে পারেন। তখন ইয়েকেতেরিনবার্গ-সোভিয়েতের গোপন সভায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তু অনুসারে তাঁকে তাঁর স্ত্রী, সন্তানাদি, এবং চাকরবাকরসহ গুলি করে হত্যা করা হয় ১৯১৮ সালের ১৬ই জুলাই রাতে। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের করুণ পতনের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে রাশিয়ার ৩০০ বছরের একচ্ছত্র রাজতন্ত্রের।


বিশেষ দ্রষ্টব্য

ফেসবুকে ২রা জুন ২০১৬ তারিখে পোস্ট করা এ কবিতার আদি পাঠটির সামান্য পরিমার্জনা করা হয়েছে এখানে। এখানে দেওয়া পাঠই চূড়ান্ত। কবিতায় ‘মাংশের দোকানে পড়েছিল, মিনাজেল, / প্রেসিডেন্টের লাশ!’ চরণ দুটি কবি বদরে মুনীরের মন্তব্য থেকে নেওয়া। ফেসবুকে কবিতাটা যখন পোস্ট করা হয়েছিল তখন কবিতার নিচে মন্তব্যের ঘরে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেখেন ‘মাংসের দোকানে পড়ে থাকে, মিনাজেল, প্রেসিডেন্টের লাশ!’ তখন সেখানেই তাঁর অনুমতিক্রমে সেলিম রেজা নিউটন ঐ মন্তব্যটিকে তার একটি অক্ষর [ মাংসের > মাংশের ] ও একটি শব্দ [ থাকে > ছিল ] পাল্টে দিয়ে মূল কবিতায় পৃথক দুটি চরণ হিসেবে আত্মস্থ করেন। পরে "সরন-প্রতিসরণ"-ওয়েবসাইটে পোস্ট করার সময় এর পূর্ববর্তী চরণটিকেও একটু বদলে নেওয়া হয়। অন্য কিছু টুকটাক ঘষামাজাও আছে। স্বতন্ত্র কারণে। — স.র.ন. রাজশাহী: ৭ই জুন ২০১৭

 

পুনঃপ্রকাশ
 
ম্যাজিক লণ্ঠন, সংখ্যা ১৩, বর্ষ ৭, আষাঢ় ১৪২৪ জুলাই ২০১৭, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
 
 
 

 

ফেসবুক, ০২-০৬-২০১৬

 
 
 
 
Logo