English | বাংলা
Logo
 

 

কার চোখ দিয়ে দেখছেন ক্রাইস্টচার্চের নূর-মসজিদের হত্যাকাণ্ডকে?

ফেসবুক-পোস্ট, ১৭-০৩-২০১৯

 

 


Taliesin Meche: https://archive.fo/p9Yvl

 

কার চোখ দিয়ে দেখছেন ক্রাইস্টচার্চের নূর-মসজিদের হত্যাকাণ্ডকে? কী দেখতে পান আপনি? যদি দেখতে পান ৫০ জন মুসলমানকে খুন করা হয়েছে তাঁরা মুসলমান বলেই, তাহলে আপনি অংশবিশেষ দেখতে পাচ্ছেন মাত্র। আপনি তার মানে খুনি ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্টের চোখ দিয়েই দেখছেন। হ্যাঁ, ওটা ব্রেন্টনেরই চোখ। ব্রেন্টনের চোখ এবং তাঁর লাইভ ক্যামেরার চোখ স্রেফ ‘মুসলমান’ দেখতে পাচ্ছিল, ‘মানুষ’ দেখতে পাচ্ছিল না। আমরা যদি খুনোখুনির বিশ্ববৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার এমনকি শুধু স্বপ্নটুকুও দেখতে চাই তাহলে আমাদেরকে ‘মানুষ’ দেখতে পারতে হবে। এটাও দেখতে পারতে হবে যে, ব্রেন্টন নিজেও একজন মানুষ। প্রশ্ন করতে পারতে হবে নিজেকে— কোন পরিস্থিতি তাঁকে এরকম শীতল রক্তের খুনি বানালো?

 

যদি আপনি ভেবে থাকেন, পশ্চিমা পৃথিবীর মানুষ মাত্রেই ব্রেন্টনের মতো মুসলিমবিদ্বেষী, মুসলমান-হত্যাকারী, তাহলে আমি আপনাকে প্রশ্ন করব, টালিয়েসেন মেশ নামের সেই জেসাস-উজ্জ্বল চেহারা মানুষটা সম্পর্কে কী বলবেন?

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড (ওরেগন)-এর রিড কলেজ-এর অর্থনীতির স্নাতক টালিয়েসেন হিজাব-পরা এক মুসলিম তরুণী ও তাঁর বান্ধবীকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেটা ছিল ২০১৭ সালের ২৬শে মে-ঘটনা। ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে যাত্রীবাহী ট্রেনে ঐ দুই তরুণীকে যা-তা নোংরা কথা বলে আক্রমণে উদ্যত হয়েছিলেন জেরেমি জোসেফ ক্রিশ্চান নামের এক শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী মানুষ। চিৎকার করে তিনি তাঁদের বলছিলেন: “মুসলমানদেরকে মরতেই হবে!” তাঁর হাতে ছিল চাকু। মেয়ে দুইটা সরে গিয়েও রেহাই পাচ্ছিলেন না। টালিয়েসেন ছিলেন ঐ ট্রেনে। তিনি ঐ শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তাঁকে বলেন, “আপনাকে এই ট্রেন থেকে নেমে যেতে হবে। দয়া করে আপনি নেমে যান।” টালিয়েসেনের পাশে গিয়ে দাঁড়ান আরো দুই সহযাত্রী। তখন তাঁদেরই ওপর ছুরি-হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ঐ শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী। তাঁর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত হন টালিয়েসেন এবং তাঁর সহযাত্রী, ৫৩ বছরের রিকি জন। সত্যিকারের শুভবোধের হিরো হিসেবে নন্দিত হন তাঁরা। কিন্তু নায়ক হওয়ার ধান্দা ছিল না টালিয়েসেনের। মাত্র ২৩ বছর বয়েসের টালিযেসেন সহযাত্রীদের কোলে মাথা রেখে মরে যেতে যেতে শেষ যে বাক্যটা উচ্চারণ করেন, তা হলো: “এই ট্রেনের সবাইকে বোলো, আমি তাঁদের প্রত্যেককে ভালোবাসি।” তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর শিক্ষক তাঁকে নিয়ে লিখেছিলেন: “আমার ছাত্র মারা গেছে পোর্টল্যান্ড হামলায়। এখন আমরা যেন অবশ্যই তাঁর মূল্যবোধ রক্ষা করি।”

 

কী বলবেন আপনি এই টালিয়েসেন মেশের ব্যাপারে? মানুষকে তিনি ‘মানুষ’ হিসেবে দেখেছিলেন। মানুষের চোখ দিয়ে দেখেছিলেন। ক্যামেরার চোখ দিয়ে নয়। ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্টের চোখ দিয়ে নিয়ে। জর্জ বুশ জুনিয়রের তৈলসিক্ত চোখ দিয়ে নয়। মতাদর্শের নজর দিয়ে নয়। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ-হত্যাকাণ্ডকে আপনি যদি স্রেফ মুসলমানের চোখ দিয়ে দেখেন, তাহলে আপনি যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়রের বিশিষ্ট বন্ধু।

 

২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক সিটির টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পরে জর্জ বুশ যখন বলেন “হয় তুমি আমাদের পক্ষে, না-হয় তুমি তুমি ওদের পক্ষে”, তখন সবচাইতে খুশি হয়েছিলেন ওসামা বিন লাদেন। আজকে যদি আপনি স্রেফ ঘৃণার চোখ দিয়ে তাকান, তাহলে সবচাইতে খুশি হবেন ক্রাইস্টচার্চের খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্ট। খুশি হবেন আল-কায়দা এবং আইএস-এর নেতৃবৃন্দ। “খুনের বদলা খুন” নীতি পৃথিবীকে রক্তশূন্য করে ফেলবে। “চোখের বদলা চোখ” নীতি জগৎকে অন্ধ করে ফেলবে।

 

খণ্ড-দৃষ্টির সাথে দৃষ্টিহীনতার পার্থক্য খুব বেশি নয়। আসুন, আমরা সমগ্র-সত্য দেখার চেষ্টা করি। যাঁর যাঁর ধর্মীয় পরিচয়ের ষোল আনা চর্চার পাশাপাশি নিজেদের মনুষ্য-পরিচয়েরও যত্ন নিই। আমিন।


 

 
 
 
 
 
Logo