শীতাতিরিক্ত একটা শীত এসে
শরীর হিম করে দিচ্ছে আমার—
কোনো শীতবস্ত্রই আর বোধহয় যথেষ্ট হবে না এই শীতে।
আপনারও কি শীত লাগছে, মোবাশ্বার হাসান?
কুকুরকুণ্ডলী হয়ে শুয়ে থাকলে থাকা হয়ত যায়
কিন্তু ‘সেবা প্রকাশনী’ থেকে
অনির্দিষ্ট ‘কুয়াশা’ আর বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের
মেজর মাসুদ রানা এসে
সঙ্গোপনে লিখে রেখে গেছে যত দৃশ্যহীন দেয়ালে দেয়ালে:
‘চুপ করে থাকতে হবে— চুপ!’
আগামীকাল ভরদুপুরে প্রেসক্লাবের মোড়ে
মেজর রাহাত অথবা স্বয়ং কাজী আনোয়ার হোসেনকে দেখলেও
চমকে উঠে ভৌ ভৌ করা চলবে না।
চুপ করে পড়ে থাকলে সত্যিই কি কম লাগবে শীত?
জীবন কি কুকুরেরও নিচে নেমে যাবে?
বরফযুগের শাদা ছায়া পড়ছে অন্ধকার রাতে—
হিমাঙ্কের নিচে নেমে যাচ্ছে চেতনা।
এগার হাজার বছর পর আবার
পরস্পর-বিযুক্ত হয়ে স্তন্যপায়ী জীবজন্তুরা ঢুকে যাচ্ছে বিভিন্ন গুহায়।
তাহলে কি কোল্ডব্লাডেড সাপের মতোন
শীতঘুমে চলে যেতে হবে হে প্রতিপালক, রাব্বুল আলামিন?
সাপুড়ের অত্যাচারে সবাই কি সাপ হয়ে হাইবারনেশনে চলে যাবে?
জেগে থাকবে অন্ধকার— শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় আঁধার?
পরাবাস্তব মেক-আপে সজ্জিত
বিজ্ঞাপিত ও প্যাকেটজাত উষ্ণতার ভিড়ে
আদিম উষ্ণরক্ত উধাও হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে—
হিমশীতল চেহারা ও ত্বকে জমছে আন্তরিক আতঙ্কের গ্ল্যামার।
ঢাকায় জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের সামনে
আপনার ঠিক সাড়ে তিন হাত দূরে
আবাসিক এলাকার কাছেই একটা গোপন জেলখানা ছিল—
গুম হয়ে যাওয়ার আগেই কি আপনি সেটা জানতেন, সিজার?
যেখানে প্রকাশ্যে আপনি দাঁড়িয়েছিলেন শেষবারের মতো
সেখানে বাতাসের অদৃশ্য বুদ্বুদের ভেতর
মানুষের চেয়ে অনেক উঁচু একজোড়া ঊর্ধকমার মাঝখানে
একটা ‘নিখোঁজ’ শব্দ লটকে আছে। সংবাদপত্রের ছাদ থেকে
সবই নাকি দৃশ্যমান এখন— কিন্তু অত উঁচু ছাদে ওঠা কী করে সম্ভব?
তাই সবাই এখনও ‘কই! শীত কই!’ বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে যে যার রাস্তায়।
এমনিতে রাজধানীতে শীত কম, শীতের আর্তি একটু বেশি—
রাজার সকাশে বসে দেশের আবহাওয়া বোঝা মুশকিলেরই বটে।
কিন্তু শীতাতিরিক্ত একটা শীতের বাতাস
শরীর হিম করে দিচ্ছে মানুষের—
কোনো শীতবস্ত্রই মনে হচ্ছে যথেষ্ট হবে না এই শীতে।
যদি একটু খড় জ্বলত! যদি
গোল হয়ে, গা ঘেঁষে বসত মানুষ! যদি উষ্ণরক্ত টের পাওয়া যেত!