English | বাংলা
Logo
 

 

কাঁচের সময়

সরন-প্রতিসরণ, ০৫-০৮-২০০৬

 
 
 
মনে জাগে দায় পাপের প্রভায়:
এ পাপ-শরীর পাপের চাকায়
পিষে দেওয়া গেলে জুটবে শান্তি,
বাড়বে না আর পাপের কান্তি;
ঘুঁচবে স্বপ্ন-শেষের ভ্রান্তি।
 
মনে পড়ে যায় ... কাঁচের সময়:
কাঁচ গেলা দায়, কাঁচ ঠেলা দায়।

 
 
আয়ু-ক্ষয়-করা প্রায়শ্চিত্ত?–
অনভিপ্রেত্য! অনভিপ্রেত্য!!
শিল্প, সানাই, সত্য, সৃজন,
মদ, গাঁজা, প্রেম, তীর্থগমন,
জীবন, মৃত্যু সকলই যখন
রাজনীতিকের পায়ের ভৃত্য–
অনভিপ্রেত্য! অনভিপ্রেত্য!!
 
রাজনীতিদের হাজার চিত্ত,
হাজার চেহারা, অঢেল বিত্ত–
পাজেরো-পতাকা-পাল্কি-বেহারা,
পুলিশ-পোশাক-টিভির পাহারা;
টুকরা-টুকরা দর্শনে ঘেরা
অযুত আয়না, নিযুত বৃত্ত।
রাজনীতি মানে রাজাই সত্য।
 
রাজনীতিকা’র কত না বাহার,
অতি-আয়োজন, অতীব আহার।
ভুখা-বিমোচনে, পদে-প্রমোশনে,
স্বজনে-ভজনে, বীণা-বিনোদনে,
কলা-ক্রিয়েশনে-রিক্রিয়েশনে
হীরামতিহার। বাকিটা প্রহার–
জনগনমনা রাষ্ট্রবিহার।
 
রাষ্ট্র প্রতাপ। পুঁজি আদিত্য।
অক্ষরজীবী কেরানি নিত্য।
তাঁহারা বিদ্যা। তাঁরাই বুদ্ধি।
তাঁরা সাহিত্য, শাসন, শুদ্ধি।
তাঁরা বিনিয়োগ– পয়-প্রবৃদ্ধি।
স্বর্গতারকা– তাঁরা অমর্ত্য।
ভূতলে প্রজার কপালে গর্ত।
 
প্রজা সনাতন সামাজিক দাস–
জীবন-জোঁয়ালে নিবেদিত লাশ।
প্রজারা ঝামেলা, অহেতু ঝক্কি–
রাষ্ট্র-চড়কে প্রজারই চরকি।
প্রজারা মুরগি, নিম্নবর্গী।
প্রজা অদৃশ্য সুদীর্ঘশ্বাস–
প্রভুর হাস্য-সুখ-পরিহাস।
 
প্রজার নামেই এ প্রজাতন্ত্র
দিনরাত জপে জনতা-মন্ত্র–
জনতারই ঘাড়ে বন্দুক রেখে
গুলি করে জনতার চাক দেখে।
জনগণ-ভোট গোনা-গাঁথা শিখে
প্রাজ্ঞ পার্টির গণনা-যন্ত্র
ডান-বাম করে ভরছে অন্ত্র।
 
 
***
 
 
ডিপ-ফ্রিজে-ফাটা কাঁচের বোতল–
ছুরি-শানা দিনরাত্রি উতল;
জমাট বরফ-কাঁচের কুচিতে,
পূণ্য-পাপের শুচি-অশুচিতে,
ভায়োলেন্স-ভরা রক্ত-রুচিতে
যুক্তি-মুক্তি-ব্যক্তি কতল–
ভাসছে শোণিতে ভূমা ও ভূতল।
 
কার পাপে ঝরে কাহার রক্ত?
কার শাপে কার প্রায়শ্চিত্ত?
বিদ্যাবাজারশাস্ত্র-ধোঁয়ার
ধুনে বেড়ে-ওঠা সময় গোঁয়ার।
জীবন মেয়ের হাতের মোয়ার
ছোটা-মুড়ি। প্রেম শক্তপোক্ত
পুঁজির পেলব পাশার ভক্ত।
 
পাশা-খেলা দিন, পাশবিক রাত,
পরিবার, সম্পর্ক, বরাত
এলোমেলো করে আঁকানো পাশায়–
বোঝা মুশকিল কে কারে ফাঁসায়,
কে বাঁচে, কে মরে কীসের আশায়,
কে জয়ী এবং কারা কুপোকাত;
কে কার আল্লা, কে লাত-মানাত।
 
 
***
 
 
উপরে ওঠার রাস্তা খোঁজার
জন্য রয়েছে মুক্তবাজার–
আছে লুকোচুরি-কম্পিটিশন,
বহুরূপী-বহুমুখী জংশন।
এ ওকে মাড়িয়ে, দিয়ে দংশন
নিচ্ছে মেকাপ সফল সাজার।
তরিকা সত্যিসত্যি মজার:
 
দারা-পরিবার সদা-পরিহার,
মাতাপিতা ভার– জগতে কে কার!
কর্মক্ষেত্র জীবন-নেত্র,
আপিসে মুক্তা, আপিসে মূত্র,
পিছ পড়ে গেলে পাছায় বেত্র।
বাকিটা অন্ধ, অসহ্যভার–
বাকিতে বহার উপ-সংহার।
 
উপ-পাঠকের সমীপে রচিত
উপ-কবিতার উপলে খচিত
বন্ধুর এই বিন্ধ্যা-পদ্য
পরকলা-যুগে বোকার হদ্দ
শিবের যে-গান গাইল অদ্য
হয়ত সে গান কাল হবে গীত–
উপ-পর্বের প্যালা-বিরহিত।
 
 
-৮৮-এফ রাবি: ২১শে শ্রাবণ ১৪১৩, ৫ই আগস্ট ২০০৬
 
 
 
প্রাসঙ্গিক তথ্য

এই কবিতাটা আমার পরিস্থিতির বিবরণ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। বইয়ে কবিতাটার নাম ছিল "কাঁচের সময়: ধান ভানতে শিবের গান"। নামটা বড় ছিল বেশি। ছোট করে দিলাম এখানে। নিচের পিডিএফ লিংক থেকে কাব্যগ্রন্থে যেভাবে ছাপা হয়েছিল তার হুবহু প্রতিরূপ হিসেবে কবিতাটা ডাউনলোড করা যাবে। উপরের শিল্পকর্মটি অস্ট্রেলীয় শিল্পী পামেলা আর্ভিং-এর আঁকা। আরেকটা কথা। এখন দেখছি মূল বইয়ে 'বিন্ধ্যা' শব্দটির বানানে য-ফলা ফস্কে গিয়েছিল। মেরামত করে দিলাম।
 
– স.র.ন.
রাজশাহী: ৩রা শ্রাবণ ১৪২৪; ১৮ই জুলাই ২০১৭
 
 

 
 
 
 
 
Logo