সরন-প্রতিসরণ, ০৪-০৬-২০০৬
আবু রেজা মিলটন: অগ্রজপ্রতিমেষু
আমরা ছিলাম একই পাখির ডানা–
উড়ে গেছি কত জায়গা-বেজায়গায়,
আমরা কখনও মানি নি কারুর মানা–
লাশকাটা-ঘরে, ঘাসের বারান্দায়।
এ ওর হৃদয়ে পালক ঘষেছি কত–
ডানা-ঝাপটানি, কানাকানি, হানাহানি;
মিলেমিশে ফের উড়েছি সময়মতো–
সাক্ষী থেকেছে নারদ নদের পানি।
আমরা খেলেছি রেললাইনের ধারে–
সৈয়দপুরে, নিলফামারির ট্রেনে;
তেবাড়িয়া হাটে হেঁটে গেছি– এক সারে
কোলেপিঠে-করা ছাগল বেচেছি ধানে।
পৈত্রিক ভয়ে পালিয়েছি ঘর ফেলে
তালাবের জলে, অচেনা আমবাগানে;
আমি ডুবে গেলে তুই টেনেছিস তুলে–
সাঁতার শিখেছি পিঠাপিঠি জল ছেনে।
মক্তবে ভোরে কোরান পড়েছি সুরে,
সুরা ইখলাস মুছেছে রাতের ভয়;
জল-পড়া টিনে, বেড়ার ফাঁকের জোড়ে
সকাল হয়েছে, সরে গেছে সংশয়।
সারা শৈশব মায়ের কান্না বুঝে
সব্বার আগে ফেটে পড়েছিস রাগে,
বুদ্ধিতে আমি জমিয়েছি জল কুঁজে
রুচিরুজিশীল আব্বার অনুরাগে।
মিলেছি আমরা ঋজু হাতে হাত রেখে
মিছিলে-স্লোগানে, ‘বিপ্লবী’ সঙ্গীতে;
বাম-মুজাহিদ সেলিমের ঢং দেখে
হেসে ফেলেছিস ভিলেনের ভঙ্গিতে–
আমার বুঝতে যুগ পার হয়ে গেছে।
ফুটে গেছি ঢাকা বড় পদবির মোহে–
অন্ধ হয়েছি রঙবেরঙের নাচে,
তুই থেকে গেলি তৃণমূল-বিদ্রোহে।
গাড়ি খুঁজে, কিনে, ঢাকা এনে, এক দিনে
আমাকে চালক বানিয়ে ফিরলি গৃহে;
তোর কাছ থেকে কত-কী শিখেছি– মনে
জমিয়ে রেখেছি, এলেছি সে বোঝা বহে–
কখনও সেসব বলি নি কাউকে আমি।
আজ এ আগাম আষাঢ়ে বৃষ্টি হাসে–
পাছে ভুল বোঝে চণ্ডীদাসের রামী,
লিখছি প্রেমের বয়ান সেই তরাসে।
জ্যৈষ্ঠে আষাঢ় নেমে এলে আগেভাগে
মনে পড়ে যায় কচুরিপানার ভেলা,
কাদা তুলে এনে মেখেছি ভায়ের মুখে–
এত স্মৃতি এক জীবনে যায় না ঠেলা।
বৃষ্টি এলেই মাটি ঠেলে মাথা তুলে
বুনো বট শেখে কঠিন রণাঙ্গন;
কি যে দুরন্ত, কি অফুরন্ত ছেলে–
চির-অবাধ্য আবু রেজা মিল্টন।
আমরা ছিলাম একই পাখির ডানা–
ডানা দুটো কবে উড়ে গেছে দু-ডাঙায়;
পাখিটারই খোঁজ নাই– সে হরিণ, সোনার;
তবু, আজও তার গান শুনি– কে শোনায়!
রবীন্দ্রভবন, রাবি:
২১শে জ্যৈষ্ঠ ১৪১৩। ৪ঠা জুন ২০০৬
প্রসঙ্গ-কথা
কবিতার সাথে ব্যবহৃত ছাপচিত্রটি বাংলাদেশ ও ভারতের প্রিন্ট মেকিং-এর কিংবদন্তী শিল্পী হরেন্দ্র নারায়ণ দাস (১লা ফেব্রুয়ারি ১৯২১–৩১শে জানুয়ারি ১৯৯৩) ওরফে হরেন দাসের। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের দিনাজপুরের মানুষ। ছবিটার নিচে শিল্পীর সাক্ষর ও সাল দেয়া আছে। সালটা আমি পড়ে উঠতে পারি নি। ছবিটার নামও আমি জোগাড় করতে পারি নি। কেউ জানলে দয়া করে আমাকে জানাবেন।
কবিতা লিখে ফেলে রাখা আমার একটা স্বভাব। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোথাও ছাপার জন্য জমা দেওয়াটা এখনও শেখা হয় নি। (শেখাটা দরকারই মনে হচ্ছে ইদানীং)। এ কবিতাটা রচনার নয় বছর পরে প্রকাশিত হয়েছিল কোনো এক বর্ষায়। ফেসবুক-নোট হিসেবে। সেখানকার তুলনায় এখানকার পাঠে হাইফেন-বিন্যাস একটু পৃথক। কয়েকটা জায়গায়।
Schema and Logo: Salim Reza Newton
Home Pic: Childhood alphabet of Lalon Susmita Meera on wall
Developed by Fecund IT SolutioNs, Powered by UniqueIT