English | বাংলা
Logo
 

 

গুরুত্বের গণতন্ত্রে সকলেই গুরু, তাই সবাই গোলাম

সরন-প্রতিসরণ, ০৮-০৯-২০১৪


 

 

 

এক.

যখন পরিস্থিতির নাম আমি দেই হাসান বা নকশাল আজিজুল হক,
লোকে বলে লোকটাকে ওপারের গপ্পে ধরেছে।


যখন অবস্থা ছিল সারাদিন সাম্যবাদী পার্টি,
ভবিষ্যত ঝর্‌ঝরা দেখে
মন খারাপ করল ময়-মুরুব্বি সবাই।

একদা জীবন হলো আন্ধা মনে প্রেমের বন্দেগি

(বাঁচব না তুমি ছাড়া আমি বাঁচব না!)
বন্ধুদের চোরা হাসি:
বিপ্লব গেছে, শালা মজনু সেজেছে!

যখন চাকরির ভয় খুন হয়,
বিষয় নিজেই হয় ধুন্দুমার অনুসন্ধান,
লোকে দেখে লোকটার চুলদাড়ি মাপমতো নাই।

ইতোমধ্যে গান ছিল, সুমন ঠাকুর এসেছিল

চরাচর ভেসেছিল সুরে।
সাথে বলাবলি ছিল:
সুমনের তো চরিত্রই নাই;
দুই দিন পর পর বিয়ে করে, ধর্ম খোয়ায়।

হাবুডুবু খাওয়া কিন্তু স্থগিত হলো না।

পূর্বমেঘ খুঁজে পড়া সনৎ সাহার
যত   প্রবন্ধের রেশ ধরে সংবাদ পত্রিকায় ‘সময় বহিয়া গেল’ ...
সিক’ স্যারে, আহমদ শরিফে।
হুমায়ূন আজাদ গেল,
বিনয় ঘোষের পর মহামতি মার্কস গেল

থেকে গেল চমস্কির জোশ।

কত কিছু পার করে
তৎপরে
যেই আমি নাম বলি ফরহাদ মজহার

পরিস্থিতি বিগড়ে যায়,
স্বতঃসিদ্ধ পেশ হয়:
আমি নামে লোকটার নির্ঘাৎ মাথার বিকার!


-৮৮-এফ রাবি: ২৯শে মাঘ ১৪০৯, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০০৩
 
 
 
দুই.

ফরহাদ মজহারকে যখন পরিস্থিতির দ্বন্দ্ব বলে জানি
ঘটনার বিবিধতা অনেকেরই আড়াল করতে সাধ জাগে।
সম্পর্কের জটিল জিজ্ঞাসা কিম্বা দ্বন্দ্বযুদ্ধ যাঁহাদের কাব্যগ্রন্থে নাই

 শুধু   আদরের পুতুপুতু ছাড়া
তাঁহাদের ঘরে ঘরে কেচ্ছা রটে।
কুৎসা ঘটে সাহিত্যের বৈঠকখানায়,
আর পার্টির অফিসে।
অভ্যাসের পিকদান নিরূপায় জমা করে অধমর্ণ ভাল্লুকের থুতু।

নির্দিষ্ট প্র-নাম
সত্যিই সামান্যের চিহ্ন হয়ে ইতিহাসে বেড়ে ওঠে কিনা

সে অনুসন্ধানে, সেই বিশ্লেষণে, সেই পরীক্ষণে
অতি অসামান্য কোনো কৌতূহলী পাঠও
মতাদর্শ-মূত্রদোষে প্রত্যাখ্যান মানে।
আর অহো!
সমবেত লজ্জা নিয়ে দিবসে লুকায়ে থাকে শেয়ালের পাল।
নিশীথ নিঃশ্বাস ফেলে কুকুরের প্রভুভক্ত গানে!
 

-৮৮-এফ রাবি: ২৯শে মাঘ ১৪০৯, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০০৩
 
 
 
তিন.

আখ্যান পাল্টিয়ে গেলে ফরহাদও উল্টিপাল্টি খান।
অতিক্রান্ত দশকের দোষে কিংবা গুণে
শিরির সন্ধিৎসা তাঁর বিষবৎ  বিড়ির শরবতসম  লাগে।
আত্মঘাতী প্রতারণা নিয়ে তোলা সামান্য সওয়াল
কিংবা  
গুরুত্বের অন্বয়-এষণা
তাঁর কাছে নিতান্তই নাপাক ঘোষণা।
যেকোনো প্রশ্নই তাঁর ‘ক্লান্ত দেহে হাসির খোরাক’।
অন্যে সব গরুগাড়ি  তিনি একা তদীয় বোরাক।
যেকোনো বিচারই তাই তাঁর জন্য স্রেফ
‘কুৎসা ও অপপ্রচার’।

ক্ষমতার অনুরাগে সবচে অধিক লাগে
(অন্বেষণ কাভি নেহি)
আনুগত্যের আচারের তেল।
তা না হলে আঁতেলের আলখাল্লা যতেক
ধানক্ষেতে
নৌপথে
(যখন-যা-দরকার-মতে)
থাকে নাকো,
থাকে না অহিংস হেফাজতে।
কর্তৃত্বের কাব্যকলা অভ্রান্ত আদর্শ রূপে ছলাকলা খেলে।
তার   অবিশ্বাসী মন
নিমেষে কতল করে প্র-ইমন,
পিরিতের ধন।
দেখা হলে অকস্মাৎ উল্টে ফেলে চোখ।

পলকে সুইচ টিপে সম্মানের সম্বন্ধে গড়া পুরাতন সেতু
ভেঙেচুরে ফেলাই তো পার্টি ও পলিটিক্সের প্রসিদ্ধ ক্যানন।
দাগানো লাগে না কোনো কামানের গোলা কোনো হেড-কোয়ার্টারে

স্বরূপকেতাবে তথা ফেসবুকে উন্মোচিত হয় তাঁর একান্ত স্বরূপ
(মানে   সিলেক্টিভ সহিষ্ণুতা, অসহিষ্ণুতা)
ফেস বাই ফেস।
আর, কী আজব কাণ্ড!

পরিস্থিতি-লীলাও অশেষ।

গোলামির জ্ঞানভাণ্ড গুরুত্বের গদা নিয়ে গদাই-মাধাই সেজে জপে গুরুনাম।
গুরুত্বের গণতন্ত্রে সকলেই গুরু, তাই সবাই গোলাম।



রবীন্দ্রভবন, রাবি: ২৪শে ভাদ্র ১৪২১, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৪
 
 
 
চার.

কর্তৃত্ব-সম্পর্ক-জালে
গোলেমালে
তবু কিন্তু ফস্কে যায় গুরুতর প্রশ্নভরা কিছু কিছু মাছ।
জিজ্ঞাসার ডিম থেকে একদিন উপ্ত হয় সম্পর্কের স্বাধীনতার সাধ।
নির্বিশেষ জল ছেঁচে ব্যক্তির বারতা বুকে জেগে ওঠে নিত্যচর দিশারী দরবেশ।
তাঁর   নান্দনিক নাচ
মদন বাউল সেজে একতারে গান তোলে
সদরে ও অন্দরের পথে:

 
‘‘ঢেকেছে তোমার পথ মন্দিরে-মসজিদে;
সাঁইজির রাস্তা রুখে আমাকে আটকে রাখে
দিশাহারা গুরুতে-মোর্শেদে
’’

সকলেই জেনে যাচ্ছে,
এমন কি আমাদের মদনা সেলিমটাও জানে,
আকস্মিক অসম্পৃক্তি থাকবে না চিরকাল
সত্যিকার শিরিতে-ফরহাদে।


আমি সেই সম্পর্কের বিবিধ জিজ্ঞাসা নিয়ে
আজকের পরিস্থিতি রচি।
 

রবীন্দ্রভবন, রাবি: ২৪শে ভাদ্র ১৪২১, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৪
 
 
 
প্রাসঙ্গিক তথ্য

মূল বইয়ে, পরিস্থিতির বিবরণ-এ, দুই পৃষ্ঠার এই কবিতাটার যে পাঠ ছিল, তা ওপরের দুটি ইমেজে দেওয়া আছে। ওপরে সেই পাঠ অতীব সামান্য পরিমার্জিত হয়েছে। এতটাই কম যে, বলতে গেলে হয়ই নি। প্রধান যে পার্থক্য ঐ পাঠের সাথে এখানে, সেটা চরণবিন্যাসে। বইটাতে টানা গদ্যের বিন্যাসে যেভাবে মুদ্রিত হয়েছে তার আসল কারণ কাব্যগত কোনো কারণ নয়। ওখানে বইয়ে পৃষ্ঠা কম পড়েছিল। পৃষ্ঠা বাঁচানোর তাড়া ছিল। এখানে যেভাবে ভেঙে দিলাম চরণগুলো, মোটের ওপর অক্ষরবৃত্তেই, সেটাই আমার আরাধ্য বটে। এই পাঠই চূড়ান্ত
। আপাতত।
 
উপরের ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা। ইন্টারনেটে বহু জায়গায় এটার ব্যবহার আছে। ছবিটা আদিতে কার তোলা এবং কোথায় প্রকাশিত তা আমি বের করতে পারি নি। কারো জানা থাকলে দয়া করে জানানোর অনুরোধ করে রাখছি। এখানে তখন উপযুক্ত কৃতজ্ঞতার সাথে আদি নামের উল্লেখ করে শান্তি পাব আমি। সংগ্রহ-করা ছবির ওপর আনাড়ি হাতে গ্রাফিক কারিকুরি করেছি অবশ্য আমিই।
 
স.র.ন. ১৫ই জুন ২০১৭, রাজশাহী
 
 

 
 
 
 
 
Logo